• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিলুপ্তির পথে চোঙা পিঠা

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে চুঙ্গা পিঠা তৈরির প্রধান উপকারণ বাশের চুঙ্গা

খাদ্য

বিলুপ্তির পথে চোঙা পিঠা

  • পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পিঠার মধ্যে একটি হলো চোঙা পিঠা। এই পিঠার প্রধান উপকরণ হলো ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল। এই দুটো উপকরণের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পিঠা।

সিলেটের গ্রামীণ এলাকার বাড়িগুলোতে আগের মতো এখন আর চোঙা পোড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে এসব বাড়িতে সারারাত চোঙা পোড়ার দৃশ্য দেখা যেত। এক সময় বাজারে মাছের মেলা বসত। মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর থেকে বড় রুই,কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর, মাছ নিয়ে তাতে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চোঙাপোড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের (সনাতন ধর্মীদের) একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এই চোঙা পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল)। এই দুই উপকরণের সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। আগের মতো এখন আর কেউ চাষাবাদও করে না।

ঢলুবাঁশ ছাড়া চোঙা পিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ, ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চোঙাকে পোড়ায় না। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চোঙা  দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চোঙার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। বর্তমানে এই ঢলুবাঁশ তেমন পাওয়া যায় না। এই বাঁশটি সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থাও।

এক সময় মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগর ও চা-বাগানের টিলায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেত। এ ছাড়া কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়, জুড়ী উপজেলার চোঙাবাড়ীতে এবং কমলগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায়ও প্রচুর ঢলুবাঁশের উৎপাদন হতো। ঢলুবাঁশের জন্য চোঙাবাড়ীও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিল। বনদস্যু ও  ভূমিদস্যুদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় অনেক আগেই হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে এই ঢলুবাঁশ কিনে বিক্রির জন্য নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারগুলোতে। বাজারে এই বাঁশের দামও এখন বেশ চড়া। ফলে ক্রেতারা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন না। ফলে  চোঙা পিঠা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads