• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
এরশাদের অধ্যাদেশ উঠল মন্ত্রিসভায়

হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ

এরশাদের অধ্যাদেশ উঠল মন্ত্রিসভায়

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৮

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের অধ্যাদেশ উচ্চ আদালতে বাতিলের আদেশ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য তোলার পর সেটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধে অধ্যাদেশটি জারি করেছিলেন। যদিও উচ্চ আদালতে সামরিক শাসনই অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। তারপরও জারির ৩৬ বছর পর অধ্যাদেশটি বাতিলে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে তুলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছাত্ররাজনীতি সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে এই ইস্যুটিসহ এ ধরনের অন্য বিষয়গুলো একত্রিত করে পরবর্তী বৈঠকে উত্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি ফেরত পাঠানো ছাড়াও বিএসটিআই আইন এবং পাটনীতি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারত সফরের ডি.লিট অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সন্তোষ জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে মন্ত্রিসভা বলেছে, এটা পুরনো ইস্যু, পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া আরো অনেকগুলো ইস্যু আছে, সবগুলো একসঙ্গে আনতে হবে। একটা নিয়ে আলাপ করা ঠিক হবে না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেছেন, ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকারের আমলে জারি করা সব আইন-কানুন, বিধিবিধান ও অধ্যাদেশ উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়ে গেছে। তাহলে ওই সময়ের একটি ইস্যু আবারো মন্ত্রিসভায় কেন উপস্থাপন করা হলো, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান হঠাৎ করে ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি কেন মন্ত্রিসভায় তোলা হলো? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল সামরিক শাসনামলের যেসব অধ্যাদেশ আদালতে বাতিল হয়েছে সেগুলো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। সে কারণেই এটি তোলা হয়।

তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বৈঠকে বলেন, আদালত এটা বাতিল করেছেন। ফলে এটি ‘আপনা-আপনি’ বাতিল হয়ে গেছে। এটি বাতিলে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী জানতে চান এর আগে আদালতে কোনো আইন বাতিলের পর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে- এ রকম রেফারেন্স আছে কি না। জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, আদালতে বাতিলের পর আর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর খসড়াটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করতেও মন্ত্রিসভায় আনতে হয়। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল। এ কারণে মন্ত্রিসভা থেকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এই ইস্যুটিসহ এ ধরনের অন্য বিষয়গুলো একত্রিত করে পরবর্তী বৈঠকে উত্থাপন করতে হবে।

মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অবাস্তবায়িত থাকলে তা মন্ত্রিসভাকে জানাতে হয়। প্রতি তিন মাস পর পর সেই প্রতিবেদন বৈঠকে উপস্থাপন করে অনুমোদন নিতে হয়। সমপ্রতি এ বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করে বিষয়টি। সেখানে বলা হয়, মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার এখতিয়ার সচিব কমিটির নেই। এর পরই বিষয়টি বৈঠকে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু এরই মধ্যে সামরিক শাসন অবৈধ সংক্রান্ত রায় হয়ে যাওয়ায় এটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিষয়টি দেখে অনেক মন্ত্রীই অবাক হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেন, পুরনো একটি ইস্যু তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছিল। তার মতে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একটি স্ট্যান্ডবাজি ছিল। কারণ তার জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন মাঠে ছিল না। নিজের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে তিনি তৎকালীন বিরোধী দলগুলোকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন।

আরেক মন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে। এই অবস্থায় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘স্টুডেন্ট কেবিনেট’ গঠন করে শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রের প্রাথমিক ধারণাও দেওয়া হচ্ছে। এ সবকিছুই ছাত্ররাজনীতির অংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সামরিক শাসনামলে প্রণীত অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে যেগুলোর প্রয়োজন আছে তা যুগোপযোগী করে নতুন করে বাংলায় রূপান্তরের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তবে সামরিক শাসনামলে প্রণীত যেসব আইন আর প্রয়োজন নেই আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এরশাদ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার জন্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তার দলের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী কী সুবিধা পেতে পারে তা খুঁজে বের করার জন্য তৎকালীন শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি আজো।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অর্জনে মন্ত্রিসভার সন্তোষ : পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে তাকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে। সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এবার অনেক দিক থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। এই ভবনের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক স্মৃতি জড়িত। শফিউল আলম বলেন, এর আগে ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে দেশিকোত্তম পদক দেয়। এবার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট ডিগ্রি দিয়েছে। দুটিই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনার কলকাতা সফর নিয়ে কথা তোলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পাটনীতি অনুমোদন : পাঁচটি বিষয়কে কৌশলগত অগ্রাধিকার দিয়ে ‘জাতীয় পাটনীতি-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১১ সালের পাটনীতিকেই যুগোপযোগী করা হয়েছে। আগেরটার থেকে বর্তমানটাতে খুব একটা পার্থক্য নেই। কিছু নতুন সংযোজন আছে। আগের নীতিমালায় পাটের সংজ্ঞা দেওয়া ছিল না, এতে দেওয়া হয়েছে। আগে ভিশন অনেক বড় ছিল, প্রায় এক পৃষ্ঠা; আর এখন ভিশনে বলা হয়েছে- দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতা সক্ষম শক্তিশালী পাটখাত প্রতিষ্ঠা। মিশন হলো- উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটপণ্য সৃজন। নতুন পাটনীতিতে মানসম্মত পাট উৎপাদন, পাটের নায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং বাজার সমপ্রসারণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাট, পাটজাত পণ্য, বহুমুখী পাটজাত পণ্য, ব্যবসায়ীসহ কয়েক বিষয়ের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads