• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ নিরাপত্তা পদ্ধতি অবলম্বন করে এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে এখানে প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। জনগণের জন্য কোনো ঝুঁকি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া এই প্লান্টের বর্জ্য নিতে রাজি হয়েছে এবং এই বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার দিকটায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটি বিবেচনায় নিয়েই এই প্লান্টের ডিজাইন করা হয়েছে।’ গতকাল শনিবার পাবনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং (উৎপাদন কেন্দ্র)’ নির্মাণকাজের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। রাশিয়ার সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই কেন্দ্র। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে এ রিঅ্যাক্টরে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যাত্রায় এই পারমাণবিক কিদ্যুৎকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিদ্যুৎকে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি উল্লেখ করে বলেন, পর্যাপ্ত এবং ধারাবাহিক বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করারও পূর্বশর্ত। সরকার দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ।

রাশিয়ান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। রোসাটম-এর প্রথম মহাপরিচালক ল্যাক্সিন আলেকজান্দার, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের (আইএই) পরিচালক দহি হ্যান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পুরো প্রকল্পটি তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সদস্য এবং এনার্জি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের সদস্য, ভারত থেকে আগত জ্যেষ্ঠ পরমাণুবিষয়ক কর্মকর্তা, তিন বাহিনীর প্রধান, পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য রুশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের পর বিগত সাত মাসে প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে শুরু হলো দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ হব এবং বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর ৩৩তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তিনি বলেন, এ ভূখণ্ডে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্বপ্ন শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলায়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। পরে পশ্চিম পাকিস্তানে সেটি সরিয়ে নেওয়া হলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর অনেক কর্মসূচির মতো এই প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যায়।

রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: সফররত রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ গতকাল রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে তারা এখানে আসেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য রুশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। দু’দেশের মধ্যে চমৎকার আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক বলবৎ থাকায় এ সময় উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ্বকাপ ফুটবলের চমৎকার আয়োজনের জন্যও রাশিয়ান ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সাহায্য ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করায়ও রাশিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে। রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যকার বিদ্যমান সহযোগিতাকে সমভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত আখ্যায়িত করে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে এই সহযোগিতাকে দু’দেশের পারস্পরিক মুনাফার জন্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহত রাখতে চায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads