• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
৮টি বিশেষ উদ্যোগে জোর

মঙ্গলবার ২৪ জুলাই ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনে ব্যক্তব্য রাখছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছবি : বাসস

সরকার

ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

৮টি বিশেষ উদ্যোগে জোর

কে কোন দল করে দেখার দরকার নেই # লালমনিরহাটে হবে অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৮

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মাদক নির্মূল ও আশ্রয়ণ প্রকল্প’সহ ৮টি ‘বিশেষ উদ্যোগ’ আরো দৃশ্যমান করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ই-ফাইলিংয়ের ব্যবহার, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি শতভাগ বাস্তবায়ন ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুযায়ী কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসকরা মোবাইল কোর্টের ব্যবহার ও ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন। গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের মুক্ত আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।

অনেকেই মনে করেছিলেন নির্বাচন সামনে থাকায় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের কোনো বিশেষ বার্তা দেবেন। কিন্তু মুক্ত আলোচনায় এ প্রসঙ্গই আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, মাঠ প্রশাসনকে গতিশীল করা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে এও ঠিক যে, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের এটাই শেষ বৈঠক। ডিসিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় ৮টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। এ সময় তারা ভিশন-২০২১ এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের কর্মপরিকল্পনার বিষয়টিও উপস্থাপন করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেওয়া একাধিক জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৮টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনের আগে এর অগ্রগতি সাধারণ মানুষের সামনে দৃশ্যমান করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ এবং ই-সার্ভিস সিস্টেমের সর্বোত্তম ব্যবহারের বিষয়ে ডিসিরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, যেসব প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা দ্রুত মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিশেষ ব্যবস্থা এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে বলেছেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য বিদ্যমান সমস্যার কথা তিনি নিজেই জানতে চেয়েছেন।

মুক্ত আলোচনায় একজন জেলা প্রশাসক বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় একই উপকারভোগী একই সঙ্গে একাধিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা গ্রহণ করছেন কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন। এ ছাড়া যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কোনো উপকারভোগী বঞ্চিত হচ্ছেন কি না তাও শনাক্ত করার জন্য সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরির কথা বলেন তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ এবং আশ্রয়ণ বা গুচ্ছগ্রাম মেরামতে প্রতি বছর থোক বরাদ্দ প্রদানের পরামর্শ দেন কয়েকজন ডিসি।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের বলেন, দুর্নীতির কারণে অনেক উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দুর্নীতি থামাতে সরকার দেশকে ডিজিটালের আওতায় এনেছে। আগে অনেক কর্মকর্তা জনগুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো দীর্ঘদিন ফেলে রাখতেন। এজন্য সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতো। এখন ই-ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে এর আওতায় আনতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষও সঠিক সেবা পাবে। প্রত্যেক অফিসে ই-সার্ভিস সিস্টেমের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি শতভাগ বাস্তবায়ন ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। ৮টি বিশেষ উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের সম্পৃক্ততা, জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগগুলো হলো- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, সবার জন্য বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ।

কে কোন দল করে দেখার দরকার নেই : গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তেজগাঁও কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। আর এতে বাধা এলে প্রয়োজনে ডিসিদের তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূলের ব্যবস্থা নিতে হবে জেলা প্রশাসকদের। এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, বিনা দ্বিধায় আপনারা এগুলো নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে ওসব দেখার কোনো দরকার নেই। আমি এটুকু বলতে পারি, আমি সরকারপ্রধান হতে পারি, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা। বাধা এলে আমরা দেখব। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমাজ থেকে ‘অশুভ শক্তিগুলো’ দূর করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের মধ্যে অনেক উদ্ভাবনী শক্তি আছে। এ শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন। একটি দেশের উন্নয়নে দেশে গণতন্ত্র এবং সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সব জেলার জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, সেদিকে কঠোর নজর রাখা এবং চলমান মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখাসহ ২৩ দফা নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও জাতীয় গৌরব, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ট্রাফিক রুল এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

দেশেই আকাশযান তৈরির পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর : ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশেই তৈরি হবে হেলিকপ্টার, বিমানসহ সব ধরনের আকাশযান। এ উদ্দেশ্যে কারখানা স্থাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। জেলার পরিত্যক্ত এয়ার স্ট্রিপে অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার স্থাপন করে প্রাথমিকভাবে বিমান ও হেলিকপ্টারগুলো মেরামত ও ওভারহলিংয়ের কাজ করা হবে। পরে সেখানে আকাশযান তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে তিনি বিমানবাহিনী প্রধানকে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলেন।

তিনি বলেন, আমি আমাদের বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা একটি অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার ঢাকায় করেছি। আর সেখানে এ ধরনের আরেকটি অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার গড়ে তুলব। বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা ‍তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কেন পারব না? আমরা এখন নিজেরা যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছি খুলনা শিপইয়ার্ডে। এ ছাড়া তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত ও আধুনিক করতে বুলেট ট্রেন চালুর বিষয়ে বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতে এক ঘণ্টায়, ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাতে দুই ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারি এবং ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত, অর্থাৎ পায়রা বন্দর পর্যন্ত যাতে যেতে পারি এজন্য আমরা বুলেট ট্রেন চালু করব। ঢাকা-সিলেট বুলেট ট্রেন চালুর কথাও তিনি বলেন। প্রধানমন্ত্রী সিলেট বিমানবন্দরকে উন্নত ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক এয়ারপোর্টে উন্নীত করার কথা জানান। গ্রামে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর কথা বলে ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো প্রতিটি গ্রামই যেন শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। আমরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে চাই। তাহলে মানুষ আর শহরমুখী হবে না। প্রধানমন্ত্রী উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads