• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রমিকের মৃত্যু ও অক্ষমের ক্ষতিপূরণ বাড়ছে

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮ নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা

সংগৃহীত ছবি

সরকার

শ্রম আইন ২০১৮ খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

শ্রমিকের মৃত্যু ও অক্ষমের ক্ষতিপূরণ বাড়ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮ নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণের সাজার বিধান কমানো, মালিকপক্ষকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। শ্রমিককে ট্রেড ইউনিয়নে যোগদানে বাধা দেওয়া বা শর্ত আরোপে সাজা হবে মালিকপক্ষের। বেআইনি ধর্মঘট ডাকার দণ্ড ছয় মাস করা, ট্রেড ইউনিয়ন করতে সমর্থনের হার কমানো, শ্রমিকদের উৎসব ভাতা আইন কাঠামোতে আনা এবং প্রধান পরিদর্শকের পদকে মহাপরিদর্শকে উন্নীত করা, নারী শ্রমিককে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে শাস্তির বিধানও আসছে প্রস্তাবিত আইনে। এ ছাড়া শ্রম আইনে করা মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ও কর্মরত শ্রমিকের মৃত্যু ও অক্ষমতার জন্য ক্ষতিপূরণ বাড়ানো হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গণমাধ্যমের কাছে সংশোধনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৬ সালে আইনটি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এটির অনেক বড় সংশোধন হয়। প্রায় ৯০টি ধারা সংশোধন হয়। খসড়া অনুমোদনের বৈঠকেও অনেকগুলো ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান শ্রম আইনে ৩৫৪ ধারা রয়েছে। সংশোধিত আইনে নতুন দুটি ধারা, চারটি উপধারা ও আটটি দফা সংযোজন; ছয়টি উপধারা বিলুপ্তি এবং ৪১ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়।

পরে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু নিজের দফতরে সংবাদকর্মীদের কাছে আইনের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইএলও (বিশ্ব শ্রম সংস্থা)-এর কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমবান্ধব পলিসি সব জায়গায় নিশ্চিত করতে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনে অনেকটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেখানে শাস্তি বেশি ছিল সেখানে শাস্তি কমানো হয়েছে। শাস্তিগুলো মোটামুটি অর্ধেক কমানো হয়েছে। অনেক নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আগে শাস্তি ছিল দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।’

শফিউল আলম বলেন, ‘কোনো মালিক শ্রমিকের চাকরির চুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়নে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা, কোনো ট্রেড ইউনিয়নে এর সদস্য পদ চালু রাখার অধিকারের ওপর কোনো বাধা সংবলিত কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি পাবেন মালিক।’

বেআইনি ধর্মঘট ডাকার দণ্ড আগে এক বছর ছিল, এখন ৬ মাস করা হয়েছে। জরিমানা আগের মতোই ৫ হাজার টাকা রয়েছে। কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে তিনি আগে ৬ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতেন। এখন সেটা কমিয়ে এক মাস করা হয়েছে।

নতুন আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সমর্থনের হার কমানো হচ্ছে। বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে মোট শ্রমিকদের ৩০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এখন সেটা কমে হচ্ছে ২০ শতাংশ। ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে আগে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগত। নতুন আইন অনুযায়ী সেটা ৫১ শতাংশ হচ্ছে।

প্রস্তাবিত আইনে নতুন জিনিস উৎসব ভাতা যুক্ত করা হয়েছে। যেটা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন। কোনো কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উৎসব ভাতা দিতে হবে। শ্রমিকরা এতদিন উৎসব ভাতা পেলেও শ্রম আইনে এ বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না।

প্রস্তাবিত আইনে প্রতিবন্ধী শ্রমিককে বিপজ্জনক যন্ত্রপাতির কাজে বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না। আগে এক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে শিশুশ্রমিককে বিপজ্জনক কাজে নিয়োগ করার বিধান ছিল।

‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ শব্দটি শ্রম আইন থেকে বাদ দিয়ে সেখানে ‘কিশোর’ শব্দ যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে।

কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করার জায়গায় বলা হয়েছে, যেখানে কেন্দ্রীয় কল্যাণ ফান্ড থাকবে, সেখান থেকে যে শ্রমিকরা সুবিধা পাবে সেখানে আলাদা গ্রুপ বীমা করার দরকার নেই।

শ্রম আদালতগুলো মামলা দায়েরের দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিয়ে দেবেন। ৯০ দিনের মধ্যে কোনোভাবে দেওয়া সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই রায় দিতে হবে। অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে।

আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী সংশোধিত আইনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ গঠন করতে পারবে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী, শ্রমিকরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে এক লাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সোয়া এক লাখ টাকার পরিবর্তে আড়াই লাখ টাকা পাবেন।

শ্রমিক সংগঠনগুলো বিদেশ থেকে চাঁদা গ্রহণ করলে সরকারকে জানাতে হবে। সংশোধিত শ্রম আইন ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads