• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের যথোপযুক্ত জবাব দেব

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন শেষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

নামফলক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী

আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের যথোপযুক্ত জবাব দেব

  • মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ
  • প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। এই মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছেন, তাদেরকেও যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন শেষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সভায় বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুর জন্য স্থানীয় ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যে অপমান আমাদের সহ্য করতে হয়েছে, তা দেশের মানুষের জানা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কোনো দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি আস্থা নেই। তারাই এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। অনেকের ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মা সেতু হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক বাধা পাড়ি দিতে হয়েছে এবং অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি আমার পরিবারের সদস্যদেরও সুনাম বিনষ্টের চেষ্টা হয়েছে। শেষে কানাডার একটি ফেডারেল কোর্টে সব অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুকে ‘গর্বের সেতু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সেতুটি সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর ওপরের ডেক দিয়ে মোটরযান ও নিচের ডেক দিয়ে রেল চলাচল করবে। দেশের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কোনো অনুমোদন ছাড়াই ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে ছিলেন। আইনি বাধ্যবাধকতায় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে হয়েছে ড. ইউনূসকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে বলা হয়েছে ড. ইউনূসকে রাখার ওপর পদ্মা সেতু নির্মাণ নির্ভর করছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধে ষড়যন্ত্র করায় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা গরিবের সুদের টাকায় বড়লোক হয় তাদের আবার কিসের দেশপ্রেম। তাদের দেশপ্রেম থাকতে পারে না। দেশপ্রেম থাকলে দেশের উন্নয়নবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারত না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২১ বছর পর যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ দেশের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। আমরা যমুনা নদীর ওপর সেতুসহ আরো অনেক সেতু করেছি। এর মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা আবার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ হাতে নিই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা দেশের স্বার্থ দেখে না, শুধু ব্যক্তিস্বার্থই দেখে। পদ্মা সেতুর সব কাজ যখন শুরু হলো তখন একটা ঘটনা ঘটল। যা আপনাদের সবার জানা। সব ষড়যন্ত্র শেষে আমরা ঘোষণা করি, আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারো সাহায্য ছাড়াই নির্মাণ হবে এই পদ্মা সেতু।

আজ বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতায় ১৫০ মিটার পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, আমরাও পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার পিতার মতো আমারও বাংলাদেশের জনগণের শক্তির ওপর অগাধ আস্থা রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারাই আমার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। জনগণের অনুপ্রেরণায় ও তাদের শক্তির ওপর আস্থাশীল হয়ে আমরা এ মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে তার সিদ্ধান্তে জনগণের সমর্থন ও সাহস জোগানের জন্য দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, রাজনীতি থেকে আমার পাওয়ার কিছু নেই, আমি রাজনীতি করি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।

এর আগে বেলা ১১টায় তিনি মাওয়ায় পৌঁছান। পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন, রেল সংযোগ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads