• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পছন্দের এপিএস পাবেন শুনেই মহাখুশি মন্ত্রীরা

সচিবালয়

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

পছন্দের এপিএস পাবেন শুনেই মহাখুশি মন্ত্রীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

দিনকয়েক আগে মন্ত্রী হওয়ার পর মুখে যে চওড়া হাসি দেখা দিয়েছিল পছন্দের একান্ত সহকারি (পিএস) না পেয়ে সেই হাসি শুষ্ক হয়ে যায়। এরপর যখন গুঞ্জন ওঠে মন্ত্রীরা এবার পছন্দের সহকারী একান্ত সচিবও (এপিএস) পাবেন না তখন মন্ত্রীদের মুখে হাসির চিহ্নটুকুও ছিল না। যেহেতু সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসন ক্যাডার থেকে মন্ত্রীদের একান্ত সচিব ঠিক করে দিয়েছেন সেহেতু মন্ত্রীরা বিনাবাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু যখন এপিএসও মন্ত্রীরা পছন্দমতো নিয়োগ দিতে পারবেন না তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে সরকার থেকে এপিএস নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আর তাতেই মন্ত্রীরা মহাখুশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা নিজেদের পছন্দের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ করতে পারবেন। এপিএস হিসেবে সরকারের ক্যাডার সার্ভিস বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তাতে সায় না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফাইলটি ফেরত পাঠিয়েছেন। তাই আগের মতো রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগে আর কোনো বাধা রইল না।

এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে পিএস নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করায় গত মঙ্গলবার একযোগ সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর জন্য পিএস নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের কারো কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তাই এখন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিজেদের পছন্দে একান্ত সচিব (পিএস) না পেলেও পছন্দের ব্যক্তিকে সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিবদের (পিএস) বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনিয়ম ও দৌরাত্ম্যের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজ থেকেই তাদের জন্য একান্ত সচিব ঠিক করে দিয়েছে। উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা নতুন সরকারের মন্ত্রীরা স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথম নিজেদের পছন্দমতো পিএস পেলেন না। না জানিয়ে একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়ায় যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন না মন্ত্রীরা। পছন্দমতো একান্ত সচিব নিয়ে তার সহায়তায় নানা অনিয়ম করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এ ছাড়া মন্ত্রীদের একান্ত সচিবরা চাকরির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। সরকার পরিবর্তন হলে তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়। অনেক সময় বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে একান্ত সচিবদেরও চাকরির সুরক্ষা দেওয়া হলো।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, আগের মতোই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী এপিএস নিয়োগ দেওয়া হবে। পিএস মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিলেও এপিএস নিয়োগে আগের রেওয়াজই বহাল থাকবে। তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যাচাই-বাছাই করে সৎ, যোগ্য এবং পরীক্ষিত কর্মকর্তাদের একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এই নতুন ব্যবস্থাটিই বহাল থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রীর পিএস ও এপিএসের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফলাও করে গণমাধ্যমে এলেও তার কোনো প্রতিকার নিতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেসবের কোনো তদন্তও করেনি। নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে অনেক সময় মন্ত্রী নিজ থেকেই এপিএসকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল এবার সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী পিএসের মতো এপিএসও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনাধীন ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আগের মতোই এপিএস নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, পছন্দের পিএস না পেয়ে মন্ত্রী হওয়ার পর আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিসর্জন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পছন্দের এপিএস নিয়োগ করতে পারব শুনে বেশ ফুরফুরে লাগছে। সরকার দিলে অপছন্দ আর নিজে নিলে পছন্দ-এটার পার্থক্য কী- জানতে চাইলে ওই মন্ত্রী বলেন, সরকার থেকে কাউকে নিয়োগ দিলে হয়তো কিছুই হবে না। কিন্তু মনে একটু খচখচানি থাকে। সারাক্ষণ মনে হবে কেউ যেন আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। নিজে থেকে কাউকে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিলে একটা স্বাধীনতা থাকে। পুরো বিষয়টিকেই তিনি মনস্তাত্ত্বিক বলে জানালেন। আরেকজন মন্ত্রী বললেন, মন্ত্রী প্রশাসনিকসহ সব বিষয়েই পিএসের পরামর্শ নেবেন। এখন সেই পিএসের সঙ্গে যদি মনের গভীর সম্পর্ক না হয়, তাহলে কাজ করা মুশকিল।

আইন ঘেঁটে দেখা গেছে, মন্ত্রীদের একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয় ‘দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেইট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেজ) অ্যাক্ট, ১৯৭৩’ অনুযায়ী। এই আইনের ১৪ (১) ধারা অনুযায়ী মন্ত্রীদের পছন্দ অনুযায়ীই তাদের একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়ার কথা। সরকার এত দিন ধরে তা-ই করে আসছে। কোনো মন্ত্রী যে কর্মকর্তাকে পছন্দ করে একান্ত সচিব নিয়োগ দেওয়ার জন্য আধাসরকারি (ডিও) পত্র লিখতেন, তাকেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিএস নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক এ মন্ত্রণালয়টির শুধু আদেশ জারি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কিন্তু এবার ভিন্ন পরিস্থিতি।

কর্মকর্তারা বলছেন, পিএস নিয়োগের এ সুযোগের অপব্যবহার করতেন মন্ত্রীরা। তারা তাদের পছন্দের কর্মকর্তাকে পিএস নিয়োগ করতেন। মন্ত্রীর পিএস নিয়োগ পাওয়ার জন্য কর্মকর্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। এতে প্রশাসনে দলাদলি প্রকট আকার ধারণ করত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা গেছে, অনেক মন্ত্রী কাকে পিএস নিয়োগ করবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যেতেন। অনেক মন্ত্রী মাসের পর মাস পিএসবিহীন থেকেছেন মনমতো কর্মকর্তা না পাওয়ার জন্য। ক্ষমতার অপব্যবহার করার বিষয়টি বন্ধ করার জন্য এবার সরকার কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলেই তাদের পিএস নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি গত মন্ত্রিসভার যেসব মন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায়ও রয়েছেন, সেসব মন্ত্রীর আগের পিএসদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মন্ত্রীরা একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব ও দুজন ব্যক্তিগত সচিব পান।  মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবরা উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আর উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বেশিরভাগ মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকার কোনো কর্মকর্তাকেই সাধারণত একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতে পছন্দ করতেন। আর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে সাধারণত মন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মীরাই নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তবে অনেক মন্ত্রী তাদের সহকারী একান্ত সচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।

গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ জনের নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন সোমবার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। এবারের মন্ত্রিসভায় ৩১ জন নতুন মুখ। এর মধ্যে ২৭ জন জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। ৪৭ জনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads