• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেতন বাড়ল পোশাক শ্রমিকদের

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেতন বাড়ল পোশাক শ্রমিকদের

প্রতীকী ছবি

সরকার

# কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান # আন্দোলন চললে কারখানা বন্ধের হুমকি

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেতন বাড়ল পোশাক শ্রমিকদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

টানা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পোশাক শ্রমিকদের বেতন কাঠামোর সমন্বয় করা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা ঠিক রেখে অপর ছয়টি গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। সংশোধনের সুবাদে গ্রেড ভেদে শ্রমিকদের মূল বেতন বেড়েছে ১৫ টাকা থেকে ৭৮৬ টাকা পর্যন্ত। গতকাল রোববার মালিক, শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন টিপু মুনশি।

তিনি জানান, গত ১ ডিসেম্বর থেকে সংশোধিত বেতন কার্যকর করা হবে। ফেব্রুয়ারির বেতনের সঙ্গে বকেয়া বেতনের সমন্বয় করা হবে। এ বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট জারি হবে। এ সিদ্ধান্তের কারণে পোশাক খাতে স্বস্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

সংশোধিত বেতন কাঠামো মেনে কাজে যোগ দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পোশাক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। কাজে যোগ না দিলে বেতন ও কারখানা দুটোই বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে টিপু মুনশি বলেন, পোশাক খাতে প্রথম গ্রেডের কর্মীরা সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল। সংশোধনের ফলে প্রথম গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে ৭৪৭ টাকা।

সংশোধনের পর দ্বিতীয় গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ছিল ১০ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১৮ সালের ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা করা বেতন ধরা হলেও সংশোধনে বেড়েছে ৭৮৬ টাকা।

২০১৮ সালে তৃতীয় গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। সংশোধন করে এ স্তরে বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। এ হিসাবে তৃতীয় গ্রেডে বেতন বেড়েছে ২৫৫ টাকা। ২০১৩ সালের কাঠামোতে ৬ হাজার ৮০৫ টাকা বেতন পেতেন তৃতীয় গ্রেডের কর্মীরা।

সংশোধন করে চতুর্থ গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন ৯ হাজার ৩৪৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ছিল ৬ হাজার ৪২০ টাকা ছিল। ২০১৮ সালের ৯ হাজার ২৪৫ টাকা বেতন ধরা হয়েছিল চতুর্থ গ্রেডের শ্রমিকদের। সংশোধনের ফলে বর্তমান কাঠামোতে তারা ১০২ টাকা বাড়তি পাবেন।

পঞ্চম গ্রেডের শ্রমিকদের ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা বেতন ধরা হলেও ২০ টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের কাঠামোতে পঞ্চম গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৪২ টাকা।

ষষ্ঠ গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে তা ছিল ৫ হাজার ৬৭৮। আর ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা করা হয়েছিল। এর ফলে ষষ্ঠ গ্রেডের শ্রমিকদের বেতন ১৫ টাকা বেড়েছে।

সপ্তম গ্রেডের পোশাক শ্রমিকদের বেতন ৮ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ আছে। পোশাক খাতে এ গ্রেডের শ্রমিকদের বেতনকেই ন্যূনতম মজুরি বলা হয়ে থাকে। ২০১৩ সালের কাঠামোতে সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালে ২ হাজার ৭০০ টাকা বাড়য়ে নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

বেতন কাঠামো সংশোধনের পর শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকাংশই ভাঙচুর চায় না। তাদের প্রায় সবাই কাজ করতে চায়। তারা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দেবেন।

বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন সংশোধিত মজুরি কাঠামোকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সোমবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। মজুরি কাঠামো নিয়ে যে অসামঞ্জস্যতা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়েছে। আজকে যে মজুরি ঘোষণা হলো আমরা স্বাগত জানাই।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম, বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আতিকুল ইসলাম, সালাম মুর্শিদী প্রমুখ।

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর হারিঝিলের বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হবে, তা শ্রমিকদের মেনে নিতে হবে। এরপরও  কেউ কাজে যোগ না দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বেতন দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কারাখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত বছরের ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয় সেখানে। ওই মজুরি কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও আশপাশের গার্মেন্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। অনেক কারখানায় নির্ধারিত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বান্তবায়ন হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ৯ জানুয়ারি শ্রম সচিবকে প্রধান করে ১২ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। সেখানে মালিকপক্ষের পাঁচজন, শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন ছাড়াও বাণিজ্য সচিবকে সদস্য করা হয়। পরদিন ওই কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে শ্রম সচিব আফরোজা খান বলেন, নতুন কাঠামোর সাতটি গ্রেডের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেড নিয়ে শ্রমিকদের আপত্তি  তারা আমলে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads