• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সুশাসনে কঠোর সরকার

জাতীয় সংসদ

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

কুসুশাসনে কঠোর সরকার

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশ পরিচালনায় কুসুশাসনে কঠোর নজর সরকারের। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে সরকার চায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিদান দিতে। এজন্য প্রতিটি স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে চায়। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচারবিভাগ, আর্থিক খাত, আইনশৃঙ্খলাসহ প্রশাসনের সব ক্ষেত্রেই কঠোর হচ্ছে সরকার। দুর্নীতি দমনে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনায় কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। দেশে ও বিদেশে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। তবে সমালোচনার পাশাপাশি আলোচনা ও প্রশংসা কুড়িয়েছে সরকারের নানা কার্যক্রম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে বড় সাফল্য। এই অভূতপূর্ব সাফল্য ও অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় নতুন সরকার। এরই মধ্যে সরকারের এক মাস পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সরকারের সুশাসন নিশ্চিত করার তাগিদ প্রকাশ করছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের আগেই মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং সর্বোপরি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ তথা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া ভিন্ন জাতির সামনে বিকল্প কিছু আর হতে পারে না। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গতিপথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচারবিভাগ, আর্থিক খাত ও আইনশৃঙ্খলাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন জোরদার করা জরুরি।

সরকার মনে করছে, ২০০৮ থেকে টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, সমতা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। দেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বর্তমান সরকারের নির্বাচনী স্লোগান ছিল, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।

আইনের শাসন : এবার সরকার আইনের শাসনের দিকে মনোযোগ দিতে চায়। সরকার মনে করছে, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই নীতির আরেকটি অর্থ হচ্ছে, কেবলমাত্র সংবিধান ও নির্বাচিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে একটা দীর্ঘ সময় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ পরিচালিত হওয়ায় আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারক নিয়োগের পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ বিচারকদের জন্য যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ, তৃণমূল মানুষের বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা, বিরোধ নিরসনে বিকল্প পদ্ধতির (এডিআর) ব্যবহার, আইনি সহায়তার জন্য জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা, বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের দক্ষতা ও সক্ষমত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। সাধারণ মানুষ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার চায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত করা হবে। জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। 

আইনশৃঙ্খলা : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে পূর্বে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের ভীতি বিরাজ করত। সেটা দূর করে একটি জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার পূর্বশর্ত হলো— স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। এখন সরকারের লক্ষ্য পুলিশকে সেবা প্রদানে আরো আন্তরিক করা।

দুদককে শক্তিশালীকরণ : দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করতে চায় সরকার। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এই মেয়াদে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি আরো জোরদার করবে। এরই মধ্যে দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিভিন্ন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হচ্ছে। ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন : সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদককে সরকার উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সন্ত্রাস-সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ড বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে।

অর্থনীতি ও আর্থিক খাত সুশাসন : চলমান  চাঙা করতে চায়। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি জোরালো করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ হাতে নেবে তারা। ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনবান্ধব : সবার জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-এর মাধ্যমে দেশকে এমন এক জায়গায় নিতে চায়, যেখানে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সব নাগরিক উন্নত জীবনযাপন করবে। গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে হুশিয়ারি দিয়েছেন। সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল ও জনবান্ধব করা হবে বর্তমান মেয়াদে।

শিক্ষায় ধারাবাহিকতা ও সুশাসন : অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকার শুরু থেকেই শিক্ষার অধিকার ও মান উন্নয়নের ওপর অগ্রাধিকার  দেওয়া সরকারের বিগত মেয়াদের সাফল্য। এরও ধারাবাহিকতা থাকবে আগামী ৫ বছরে। এজন্য শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ প্রতিবেদককে গত মঙ্গলবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসেছেন বিপুল জয়ে। তিনি অতীতেও দেশের মানুষের সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই ধারাকে আরো জোরালো করা হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সম্প্রতি সচিবালয়ে বলেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন, এটা ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব। আমরা সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করব। এই অঙ্গীকার এবার আমাদের।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সুশাসনের কথা বলা হয়েছে জোরালোভাবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে। প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ফোরামে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। যদিও জয়ের কোটি কোটে টাকা লোপাটের বিষয়ে কিছু বলেননি।  প্রতি স্তরে জবাবদিহিতা আনা গেলে মানুষ হয়রানিবিহীনভাবে সেবা পাবে। দুর্নীতি কমবে। অর্থের অপচয় কমবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads