• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ই-গভর্নমেন্ট সূচকের অর্জন লক্ষ্য ছাড়িয়েছে

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্ট সূচকের অর্জন লক্ষ্য ছাড়িয়েছে

সংগৃহীত ছবি

সরকার

ই-গভর্নমেন্ট সূচকের অর্জন লক্ষ্য ছাড়িয়েছে

# এবার ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ # আড়াই হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে পাঁচ বছরে মাত্র পাঁচ ধাপ উন্নতির লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৩ সালে নেওয়া হয়েছিল কর্মসংস্থান ও সুশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার (এলআইসিটি) শীর্ষক প্রকল্প। ৭ কোটি ডলার ঋণচুক্তির পর এ প্রকল্পে আরো ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক। এ সময় ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে ১৫০ থেকে ৩৫ ধাপ উন্নতি করে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১১৫তম স্থানে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নারীদের তথ্যপযুক্তি ব্যবহারের হার বৃদ্ধি এবং এ খাতে কর্মসংস্থান ও রফতানি বৃদ্ধিতে সফল এ প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে আগামী জুন মাসে। এর আগেই সরকারি খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়াতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমন্বিত ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগের প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় নতুন প্রকল্পটিতেও অর্থায়ন করবে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল গভর্নমেন্ট শীর্ষক নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এতে অর্থ সহায়তার অনুসন্ধান করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ইআরডিতে অনুরোধ পাঠানো হয়।

অনুরোধের ভিত্তিতে বেশ কিছু দাতা দেশ ও সংস্থায় সহায়তা চায় ইআরডি। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ৩০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্রও তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ৩০ কোটি ডলার সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে অবশিষ্ট ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয়ের ৯৮ শতাংশ অর্থই আসবে বিদেশি সহায়তা থেকে।

প্রকল্পে সহায়তার বিষয়ে তৈরি করা বিশ্বব্যাংকের কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেয়। এর আওতায় গত আট বছর ধরে দেশের উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সহজীকরণের কাজ চলছে। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুশাসন ও দক্ষ সরকারি সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও নাগরিকদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ রয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ইতিবাচক ফলাফলে ভিত্তি করে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উন্নত ডিজিটাল সেবা দিতে আরো কৌশলগত, সামগ্রিক ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে চায়। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন দেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এ পদ্ধতি সরকারি ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সম্পদ ও সেবার সমন্বয়ে ওয়ান স্টপ পরিষেবা বিতরণ নিশ্চিত করা হবে। অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যের মতো বেশ কিছু দেশে এ পদ্ধতি সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

মোটা দাগে চারটি খাতে প্রকল্পটির আওতায় অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে বিসিসি। এর আওতায় প্রযুক্তি সেবার বিভিন্ন অবকাঠামো প্রতিষ্ঠায় ৭ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এ অর্থ ব্যয় করে বিসিসির জাতীয় তথ্যকেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। সরকারের সব দফতরের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ তথ্যকেন্দ্রকে ক্লাউড সেবার আওতায় আনা হবে। ক্লাউড প্রযুক্তির ফলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা প্রযুক্তি অবকাঠামোর নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিতে পারবে। এ তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় ক্লাউড সেবার বাইরের বিভিন্ন সেবা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে সংস্থাগুলো। বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা দিতে সরকারের দফতরগুলো বাড়তি ব্যান্ডউইথ পাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ইন্টারনেটে সরকারি সেবা দিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্সের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। প্রযুক্তিনির্ভর সুশাসন ও রাজনৈতিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হবে ৫ কোটি ডলার। এর আওতায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উন্নতি কার্যক্রমের পর্যালোচনা, হালনাগাদকরণ, মূলধারায় নিয়ে আসা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। এ কম্পোনেন্টের আওতায় ই-গভর্নমেন্ট ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি আইনি কাঠামো নিশ্চিত করা হবে। এর বাইরে প্রকল্পটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে আরো ৩ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির রূপান্তর সম্পর্কে সর্বোচ্চ ধারণা নেওয়ার সুযোগও রয়েছে দেশটির সামনে। এ পদ্ধতির প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ কম খরচে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গবেষণায় নতুন কোনো অর্থ ব্যয় না করেই এ প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রতিটি দফতরকে ডিজিটাল সেবায় আনার সুযোগ রয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় সরকারের প্রতিটি দফতরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ না দিয়ে সামগ্রিকভাবে ব্যয় করায় অর্থের সাশ্রয় হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, প্ল্যাটফর্ম, অ্যাপ্লিকেশন বা অন্যান্য সেবা থেকে অন্তত দুটি ব্যবহার করা সরকারি দফতরের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সরকারের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা ব্যবহারকারী ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়বে। নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারী সরকারি দফতরের সংখ্যা বাড়বে। অন্তত ৫০ লাখ নাগরিককে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে। এ সুবিধা পাওয়া নাগরিকের অর্ধেক নারী।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিয়ে এলআইসিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিসিসি। এর আওতায় সরকারের ৪০ শতাংশ কর্মীকে প্রযুক্তি-দক্ষতা উন্নয়নে এক বা একাধিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। সবশেষ হিসাবে এর হার উন্নীত হয়েছে ৩৬ শতাংশে। এর আওতায় প্রযুক্তি খাতে ৪২ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যের বিপরীতে এ পর্যন্ত অর্জন ৩৭ হাজার। এ খাতে ২০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার দক্ষতা প্রশিক্ষণের লক্ষ্য থাকলেও এ পর্যন্ত অর্জন ৩১ হাজার ৯৭৭।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads