• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
জামালপুরে গড়ে উঠবে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী

শেখ হাসিনা নকশিপল্লী

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

জামালপুরে গড়ে উঠবে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী

# ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প উঠছে একনেকে বাদ যাচ্ছে বিলাসী স্থাপনা # পরিকল্পনা কমিশনের হস্তক্ষেপে সাশ্রয় ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০১৯

জামালপুর ও শেরপুরের হস্ত, কারু, তাঁত, নকশিশিল্পের শ্রমিকদের আবাস ও কর্মসংস্থান হবে একই চত্বরে। ৩০০ একর জমিজুড়ে গড়ে উঠবে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী। এতে নকশিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নতুন ডিজাইন প্রবর্তন ও উদ্ভাবনে থাকবে সার্ভিস সেন্টার। বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নেও থাকবে ব্যবস্থা। এসব লক্ষ্য সামনে রেখে ৭২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী, জামালপুর (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, থিমপার্ক, লেকপার্ক, খেলার মাঠ, ডকইয়ার্ড, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, অ্যাম্ফিথিয়েটার, সিটিং এরিয়া ও রেস্ট হাউজসহ বিভিন্ন বিলাসী স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করে গত বছর ২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিলাসী স্থাপনা বাদ দিয়ে নতুন করে প্রস্তাব তৈরি করতে প্রকল্পটি ফেরত পাঠায় কমিশন। পরে ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পাঠায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশনের উদ্যোগে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৬৬ শতাংশ কমেছে। প্রকল্পটির আওতায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। উন্নয়ন করা হবে ১৪ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটারের বেশি ভূমি। পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নেও থাকবে অর্থ বরাদ্দ। একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।

অবশ্য প্রকল্পটির আওতায় জমির ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জামালপুর ও শেরপুরে নকশিশিল্পের প্রায় ৩৭৬ উদ্যোক্তা থাকলেও প্রকল্পে ১ হাজার ১৮৪ পরিবার পুনর্বাসনের সংস্থান রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সভায় প্রশ্ন উঠলে ভবিষ্যতে এ খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনায় অতিরিক্ত শ্রমিকের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিকের পুনর্বাসনেও ৩০০ একর জমি প্রয়োজন হবে না বলে সভায় দাবি করেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, কিছুদিন আগে একনেকে অনুমোদন পাওয়া শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী প্রকল্পের ১২০ একর জমিতে ২০১৬টি তাঁতি পরিবার পুনর্বাসনের উদ্যোগ রয়েছে। তাঁত পল্লী প্রকল্পে ৫তলা ভবনের সংস্থান থকায় শ্রমিক থাকতে পারবেন বেশি। অন্যদিকে নকশিপল্লী প্রকল্পে দ্বিতল ভবনের কারণে বেশি জমিতে থাকবেন কম শ্রমিক। এ অবস্থায় নতুন প্রকল্পটিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে কম জমি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবহমান কাল থেকেই বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্যাবলিসংবলিত নকশিকাঁথার চাহিদা দেশব্যাপী। নকশিকাঁথা জামালপুর জেলার ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, আসলামপুর, মেলান্দহ ও সদরসহ সব উপজেলায় কমবেশি নকশিকাঁথা তৈরি হয়। জেলায় এ-সংক্রান্ত প্রায় ৩০০ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশী শেরপুর জেলায় প্রায় ৭৬ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সদর ও বকশিগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন তাঁতি রয়েছেন। জামালপুর ও শেরপুর জেলায় ২৬১টি তাঁতি পরিবার রয়েছে। দুই জেলায় রয়েছে ৩০৫টি পিট ও ২০০টি জামদানি তাঁত। নানা প্রতিকূলতার কারণে এ অঞ্চলে ব্যবসাটির প্রসার ঘটেনি। বিপণন সমস্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্পের বিকাশ হয়নি। ফলে এ খাতের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা অনটনে রয়েছেন। সরকারের সহায়তা পেলে শিল্পটি আবার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস জানান, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত নেই। এর প্রক্রিয়াকরণ শুরু করতে নিয়ম অনুযায়ী পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জামালপুর জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক নকশিশিল্পীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তাদের জীবনযাত্রার মানও বাড়বে। নকশিশিল্প ও তাঁতশিল্পে বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক জড়িত বিধায় প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং তাদের ক্ষমতায়ন হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads