• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘বেশি লাভ করতে গিয়ে সর্বনাশ আনবেন না’

গণভবনে গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি : পিআইডি

সরকার

‘বেশি লাভ করতে গিয়ে সর্বনাশ আনবেন না’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৯

অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় ভবনকে ‘মৃত্যুকূপ’ না বানানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতি ইঞ্চি জায়গা লাভজনক করতে গিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না। সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহতের প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন লাগলে নেভানোর দায়িত্ব ফায়ার ব্রিগেডের। কিন্তু আগুন যাতে না লাগে যারা দালানকোঠা বানান, যারা বসবাস করেন, যারা ব্যবহার করেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। ‘আমি বলতে চাই, তাদেরও দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটাই পালন করা হয় না। আর সবকিছু হলে দোষ হলো সরকারের।’

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে চারটি তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নিহত হন ২৬ জন। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুনে ৭১ জন প্রাণ হারান। এ ছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চৈত্র ও বৈশাখ মাস শুকনো মৌসুম হওয়ায় সাধারণত এ সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায়। খবর বিডিনিউজ। এ তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব, যেন সেখানে আগুন না লাগে, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা যেন থাকে। আর সঙ্গে সঙ্গে কী করতে হবে সেটাও যেন দেওয়া থাকে। প্রতি ইঞ্চি জায়গাই লাভজনক করে ব্যবহার করতে গিয়ে নিজেদের সর্বনাশটা যেন কেউ ডেকে না আনে। সর্বস্বান্ত না হন।

অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের ওপর হামলা, ঘটনাস্থলে অহেতুক ভিড় জমানো এবং সহায়তা করার বদলে সেলফি তোলার সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমাদের ফায়ার ব্রিগেড, সিভিল ডিফেন্স খুব দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানেই আগুন লাগছে, সাথে সাথেই আমাদের লোকেরা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণে যায়, আমাদের কিছু লোক খামাখা উত্তেজিত হয়ে সেই ফায়ার সার্ভিসের লোকদের গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে একটা গাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। যে মারছে সে যদি না মেরে অন্তত এক-আধ বালতি পানি নিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করত বা কীভাবে আগুন নেভানো যায় সে চেষ্টা করত তাহলে তারা ভালো কাজ করেছে বলে আমরা বিবেচনা করতাম।

বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিউনিয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সেখানে আটকেপড়াদের স্বজনদের পাশাপাশি উৎসুক জনতা ভিড় করেন, যাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের চলাচলে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন লেগে গেছে, দুনিয়ার লোক গিয়ে সেখানে হাজির। ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারে না, মানুষ যেতে পারে না এটা কোন ধরনের ব্যাপার? সবাই দেখতে চায়। সেলফি তোলে, ছবি তোলে। এখানে সেলফি তোলার কী হলো আমি বুঝতে পারি না। সেলফি না তুলে কয়েক বালতি পানি নিয়ে আসুক বা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করুক বা উদ্ধারের কাজ করুক। সেটা না করে সেলফি তুলে কী আনন্দ সেটা দেখে আমার খুব অবাক লাগে, আমাদের দেশের মানুষের এই মানসিকতাটা পরিবর্তন করতে হবে। এফআর টাওয়ারের আশপাশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আগুন নেভাতে সহায়তা করায় তাদের সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বেশ কিছু সাধারণ মানুষও দায়িত্ব পালন করেছে এবং ভবিষ্যতে এভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আর মিডিয়া এমনভাবে দেখায়, এই দেখানোর ফলে মানুষের আরও আকর্ষণ হয়, আরও ছুটে যেতে চায়। সেখানে মিডিয়ারও একটা ভূমিকা আছে যে, এ ধরনের ঘটনায় মানুষের সাহায্য করা উচিত।

ঢাকা শহরে এক সময় খাল, পুকুর ও লেক থাকলেও তা বেদখল হয়ে পানির অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আরেকটা সমস্যা সেটা পানির সমস্যা। সবচেয়ে দুঃখজনক ঢাকায় এত খাল, বিল ছিল, এত পুকুর ছিল! অথচ এখন নেই। আর পুকুর দেখলেই সেখানে একটা দালান বানাবে এটা একটা প্রবণতা। গুলশান লেক এখন যা আছে তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, একেকজন ক্ষমতায় এসেছে; জিয়া আসছে অর্ধেক ভরে প্লট বানিয়ে দিয়েছে। এরশাদ আসছে প্লট বানিয়ে দিয়েছে। খালেদা বানিয়েছে। এইভাবে বানাতে বানাতে অর্ধেকটা গেছে। আর বনানী লেকটাতো বিএনপি আমলে বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে প্লট বানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি পল্লী হয়ে গেছে সেখানে। এভাবে জলাধারগুলো একে একে বন্ধ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পানি নাই, ভূমিকম্প হলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। দালানগুলো এমনভাবে বানানো হয় সেখানকার ফায়ার এক্সিট-ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন করতে গিয়ে ফায়ার এক্সিট বন্ধ। মার্কেটগুলোতে যেখানে ফায়ার এক্সিট, সেখানে সব মাল রাখার জন্য অথবা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads