• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কেমিক্যালপল্লীর আগেই অস্থায়ী গুদাম

কেমিক্যালপল্লীর আগেই অস্থায়ী গুদাম

সংগৃহীত ছবি

সরকার

আজ একনেকে উঠছে ৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প

কেমিক্যালপল্লীর আগেই অস্থায়ী গুদাম

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৯

২০১০ সালে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর রাজধানীর কেরানীগঞ্জে স্থায়ী কেমিক্যালপল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ৯ বছরে প্রকল্পটি অগ্রগতি প্রণয়নের মধ্যেই রয়ে গেছে। শূন্য অগ্রগতির প্রকল্পটিতে এবার বরাদ্দ আছে ৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। চলতি বছর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আবারো নড়েচড়ে উঠেছে প্রকল্পটি। গতি আনতে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই অস্থায়ীভাবে কেমিক্যাল স্থানান্তর করতে গুদাম নির্মাণে পৃথক একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আজ মঙ্গলবার একনেক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এর আওতায় আগামী এক বছরের মধ্যেই রাজধানীর শ্যামপুরেই নির্মিত হবে ৫৪ অস্থায়ী গুদাম। সেখানে স্থানান্তরিত হবে রাসায়নিকের মজুত। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় বৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের একটি তথ্যভাণ্ডারও করা হবে।

একনেকের অনুমোদন পেলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত নেই। রাষ্ট্রীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থ বিবেচনায় এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অনুমোদন পূর্ব সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। গত মাসে এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন দাহ্য ও উদ্বায়ী রাসায়নিকের নিরাপদ সংরক্ষণ ও পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের দ্রুত স্থানান্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৫৪টি গুদাম নির্মাণ। এ ছাড়া তিনটি অফিস ভবন ও একটি মসজিদ নির্মাণ, দুর্ঘটনার সতর্কতা হিসাবে ১ লাখ গ্যালন ধারণক্ষমতার একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাঙ্ক এবং একই আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ, প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার লিটার শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইটিপি স্থাপন, ৯টি ফায়ার হাইড্রান্টসহ স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩০টি সিসি ক্যামেরা ও অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন-ট্রান্সফরমান-জেনারেটর, রাস্তা, ড্রেন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিস কমিশনের মতামতে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর হবে। এতে রাসায়নিক কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পাশাপাশি রাসায়নিকের নিরাপদ মজুত ও সরবরাহ সম্ভব হবে। তা ছাড়া পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার জনগণের জানমালের সুরক্ষাও হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন যোগ্য বলে কমিশন মনে করে।

প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর পুরান ঢাকা ঐতিহ্যবাহী ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। অনেক দিন ধরেই পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা চলে আসছে। এ কারণে এসব রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে এলাকাটিতে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে রাসায়নিকের গুদাম অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এতে আরো বলা হয়, ২০১০ সালে নিমতলী এবং সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরই মধ্যে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী কারখানা ও গুদাম নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এজন্য গত অক্টোবরে কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে কেমিক্যালপল্লী স্থাপনের প্রকল্পও নেয় বিসিক। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দ্রুততম সময়ে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির খালি জায়গায় এসব অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করবে বিসিআইসি। এসব গুদাম এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যাতে পরবর্তীতে রাসায়নিকের স্থায়ী কারখানা ও গুদাম নির্মাণ হলে এসব গুদাম অন্য কোনো পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা যায়। তা ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব গুদাম নির্মাণে সক্ষম এমন ঠিকাদারও প্রস্তুত রয়েছে।

মন্ত্রণালয় আরো বলছে, এসব গুদামে অতিদাহ্য কেমিক্যাল রাখা হবে। তবে কোনো পণ্য এখান থেকে বিক্রি হবে না, শুধু গুদাম হিসেবে ব্যবহার হবে। এই স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণে আধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে।

প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকার বৈধ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের একটি ডাটাবেজও তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে এখানকার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো নিরাপদ জায়গায় দ্রুত স্থানান্তরের মাধ্যমে রাসায়নিক কারণে সৃষ্ট সব দুর্যোগ থেকে যেমন পরিত্রাণ মিলবে, তেমনি চাহিদামাফিক সুশৃঙ্খলভাবে ও নিরাপদে রাসায়নিক পদার্থ আমদানি, মজুত ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার মানুষের জানমালের সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন এবং শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads