• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মন্ত্রিপরিষদে রদবদল

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

মন্ত্রিপরিষদে রদবদল

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২০ মে ২০১৯

সরকারের পথচলার প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় গতকাল রোববার মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব কাটছাঁট করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো গঠিত সরকারের পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় আরো নতুন মুখ যোগ হওয়ার আলোচনা চলছে। জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভায় যোগ হতে পারে নতুন মুখ। চমকের মন্ত্রিসভায় জনপ্রিয় ও নতুনদের দ্বিতীয় দফায় যোগ করে আরো চমক দিতে চায় সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র বাংলাদেশের খবরকে এসব তথ্য জানায়।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। সরকারি ও  ব্যক্তিগত সফরে প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার আগে মন্ত্রিসভায় নতুন সদস্য যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ সময়ের মধ্যে না হলে শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর শেষে দেশে ফেরার পর  নতুনদের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার ডাক পড়তে পারে। ফলে ঈদের পরও হতে পারে মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো সম্প্রসারণ। একাদশ সংসদের নতুন অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হবে। আর সব ঠিক থাকলে আগামী ২৮ মে ঢাকা ছাড়বেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। জাপান, সৌদি আরব ও তৃতীয় আরেকটি দেশ সফর শেষে তিনি ঈদের পর দেশে ফিরবেন। জাপান ও সৌদি আররে রাষ্ট্রীয় সফরের পরে ব্যক্তিগত সফরে আরেকটি দেশে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে সরকার গঠনের পর গতকালই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার দায়িত্বে পরিবর্তন এলো। ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পুনর্বিন্যাস করে এ দায়িত্ব বণ্টন করেন। দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করে পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের আগে মন্ত্রিপরিষদে কিছু রদবদল করা হয়েছে বলেও দাবি করে সূত্র।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে শুধু ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব আর তার হাতে থাকল না। ওই বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এখন এ বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন।

একইভাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের দায়িত্বও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। আর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে শুধু পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, নতুন সরকারের পথচলার মাসখানেক পর থেকেই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে সরকারের পরিকল্পনা আছে বলে প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দফায় সম্প্রসারণে আরো অন্তত আট থেকে দশজন যোগ হতে পারেন। তবে এ সংখ্যা দশের বেশি হবে না। সেখানেও নতুনদের প্রাধান্য থাকবে। আগের দুইবারের মন্ত্রিসভার সফল ও জনপ্রিয় মন্ত্রীদের কেউ কেউ বর্তমান মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা যোগ হতে পারেন- এ নিয়ে আওয়ামী লীগ, দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ১৪-দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নতুনরা কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন, এমন বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশও চলছে। আগের সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা ও নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কারো নতুন করে মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন আলোচনাও চলছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, তা একান্তই দলের সভাপতি শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে।

আগের সরকারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন আর একাদশ সংসদে যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কারো মন্ত্রিসভায় নতুন করে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগের সরকারে মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন না, তাদের মধ্যে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দায়িত্ব পেয়ে থাকলেও চার থেকে পাঁচজন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জোটের শরিক দলের কেউ দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও অনেকের। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের বর্তমান মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। শরিক দলের কাউকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। দ্বিতীয় দফায়ও ১৪ দলের কারো মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মন্ত্রিসভায় যারা নতুন করে যোগ হতে পারেন তাদের মধ্যে আলোচনায় আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (১৯৯৬-২০০১) সাবেক একান্ত সচিব। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী এ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। নৌপরিবহন, পানিসম্পদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে কেউ এখনো শপথ নেননি। তাকে ঘিরে এ তিন মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।

আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত। গত ৩ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। সৈয়দা লিপিকে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আপাতত থাকছে ছয়টি মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও আছে।

সূত্রমতে, জোর প্রচারণায় আছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নাম। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকাকালে হানিফ দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসছেন- এমন আলোচনায় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ছয়জন নেতা বিশেষভাবে এগিয়ে আছেন। তারা হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মেসবাহ উদ্দিন ও বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের সম্মানিত করা হবে বলে ইতোমধ্যে দলের এক যৌথসভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই জানান।

দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলের নীতিনির্ধারকরা ধরে নেন ওই ছয়জনের মধ্যে ‘টেকনোক্র্যাট কোটায়’ এক বা একাধিক জন মন্ত্রিসভায় ঠাঁঁই পেতে পারেন। মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পেলে তারা দলের আরো গুরুপূর্ণ পদ পেতে পারেন। চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তখন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দিয়ে চমক দেখাতে পারে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads