• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কপাল খুলছে না শরিকদের!

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে

কপাল খুলছে না শরিকদের!

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১২ জুলাই ২০১৯

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের সাত মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হচ্ছে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয়বারের মতো হচ্ছে রদবদলও। এবার মন্ত্রিসভায় পদোন্নতিও হচ্ছে। ‘চমকের মন্ত্রিসভায়’ জনপ্রিয় ও নতুন মুখ দ্বিতীয় দফায় যোগ করে আরো ‘চমক’ দিতে চায় সরকার। মন্ত্রিসভার নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় আছেন মূলত আওয়ামী লীগেরই নেতারা। দলটির নেতৃত্বের মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের কোনো নেতার নাম নেই আলোচনায়। প্রথমবারের মতো সম্প্রসারণ হলেও ‘কপাল পোড়া’ শরিকদল ও বাম নেতাদের মধ্যে কারো মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী শনিবার নতুনদের শপথ নেওয়ার পরও মন্ত্রিসভা শতভাগ আওয়ামী লীগেরই থাকতে পারে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত জানুয়ারি মাসে নতুন সরকারের পথচলা শুরুর মাসখানেক পর থেকেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে সরকারের পরিকল্পনা আছে বলে দলের মধ্যে প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১ জুলাই সাংবাদিকদের জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার (আজ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা শপথ নেবেন।’ তবে কতজন শপথ নেবেন শনিবারে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। একজনকে নতুন করে প্রতিমন্ত্রী ও আরেকজন প্রতিমন্ত্রীকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করলেও তাদের কারো নাম উল্লেখ করেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় নতুন অন্তত তিনজনের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেসা ইন্দিরাকে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। গাজীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার নামও আছে নতুন মুখ হিসেবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসা ইমরান আহমদ শনিবার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে পদোন্নতির মাধ্যমে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, আলাপ-আলোচনায় বেশি আসছে নৌপরিবহন, পানিসম্পদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর কথা। ওই তিন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে কেউ এখনো শপথ নেননি। রদবদলের মাধ্যমে ওই মন্ত্রণালয়গুলোতে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্যও অন্য মন্ত্রণালয়ের কাউকে এ মন্ত্রণালয়ে আনা হতে পারে বলেও আলোচনা আছে। অর্থমন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ভাবা হচ্ছে। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হতে পারে, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে। সরকারের পাঁচ মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন এনে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ফলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে কেউ নেই।

অন্যদিকে জোটের শরিক দলের কেউ দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও অনেকের। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের বর্তমান মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। শরিক দলের কাউকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। দ্বিতীয় দফায়ও ১৪ দলের কারো মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা না দেখে ‘ক্ষুব্ধ’ শরিক দলের কেউ কেউ। এবারের মন্ত্রিসভায় শরিক দল থেকে অন্যবারের মতো কাউকে না রাখা ও আওয়ামী লীগের পূর্ণ মন্ত্রিসভা হওয়ায় ১৪ দলের অনেকে ‘ক্ষুব্ধ’ হন। পরে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হলে শরিক দলগুলো থেকে কেউ কেউ ঠাঁই পেতে পারেন, এ আশায় ছিলেন তারা। তাদের দাবি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় যেমন জোটের শরিকরা উপেক্ষিত, তেমনই এ সরকারের নানা আচরণ ও কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোটের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। মন্ত্রিসভা ছাড়াও অনেক জায়গা আছে, যেখানে ১৪ দল রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ‘সরকারের অনীহার’ কারণে তা হচ্ছে না বলেও তাদের অভিযোগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, তা একান্তই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দপ্তরই নির্ধারণ করবে, কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

এর আগে সরকারের পথচলার প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় (গত মে মাসে) মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্বে কাটছাঁট করা হয়। তখন দুই পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব কমানো হয়েছিল। একজন প্রতিমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে শুধু স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী করা হয়। স্বপন ভট্টাচার্যকে দেওয়া হয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে শুধু ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। আর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে দেওয়া হয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads