• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বেসরকারি খাত নিয়ে উল্টো পথে সরকার

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

বেসরকারি খাত নিয়ে উল্টো পথে সরকার

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৯

২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের জন্য একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। আওয়ামী লীগ সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার ঘোষণা করে তাতেও বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাপক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। উল্টো সরকারের কিছু পদক্ষেপ বেসরকারি খাতের প্রসারকে সংকটে ফেলছে। মুদ্রানীতি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারের ঋণপ্রবাহসহ গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে অগ্রাধিকার পায়নি বেসরকারি খাত।  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। সেটি না করলে সরকারের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তাতেও বেসরকারি খাতকে টেনে ধরে সরকারের ঋণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

মুদ্রানীতিতে আর্থিক খাতের যেসব সমস্যা আছে, তার কিছুটা স্বীকৃতি থাকলেও এর থেকে উত্তরণের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণের  লক্ষ্য ধরা হয়েছে।  এটি অনেক কম হয়েছে। কারণ ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ব্যক্তিখাতে ঋণের লক্ষ্য ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ধরা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে তা অর্জনে ঋণমান নিয়ে নির্দেশনা থাকতে হবে। কিন্তু  ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলেও তা বিনিয়োগে মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে। তাহলে বিনিয়োগের ৮০ শতাংশ কোথায় থেকে আসবে-এসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল -২.৪ শতাংশ। তবে আগামী ছয় মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি আরো বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।  আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ ১২ দশমিক । এতে বেসরকারি খাত আক্রান্ত হবে। এমনিতে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি। তার সঙ্গে সরকার যদি বেশি ঋণ নেয় তবে বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হবে।

নতুন অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় বেসরকারি খাতের বিষয়ে বেশ কিছু জায়গায় কথা বলেছেন। এছাড়া অর্থ বিলেও কিছু বিষয় এসেছে। তবে তা সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতের স্থবিরতা কাটাতে আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার।

জানা গেছে, সরকার আগামী দিনগুলোতে, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, রপ্তানি খাত, আবাসন খাতসহ সেবাখাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যেতে চায়। এর উদ্দেশ্য হলো দারিদ্র্য নিরসন, আয়-বৈষম্য কমানো এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করা। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গতিশীল করতে হবে। এসব বিষয় এবার অর্থমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি বলেছেন, উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে কীভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা কিংবা রোডম্যাপ এখন স্পষ্ট হয়নি। এ কারণে সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস করতে হবে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে ভোগ ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রী অবশ্য এবার বাজাটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৪ শতাংশের সামান্য বেশি হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি বিনিয়োগ একটি ঘরে আটকে আছে। সম্প্রতি কমে গেছে বেসরকারি ঋণের হার। অর্থনীতিতে প্রকট সংকট চলছে। অবকাঠামো সমস্যা পুরনো। কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার করা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, আর্থিক খাতের সংস্কার, সরকারি বিনিয়োগ এবং বড় অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকার বাড়াতে হবে।

বিশেষ করে ব্যাংকঋণের সুদহার নিয়ে ব্যবসায়ী মহল কার্যকর পদক্ষেপ আশা করেছে দীর্ঘদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কার্যকর হয়নি। অবশ্য অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ঋণের সুদহার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সূত্র বলছে, সংকট সমাধান না করে কেবল প্রজ্ঞাপন দিয়ে ঋণের সুদহার কমানো যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা দরকার। বিনিয়োগের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেট ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সক্রিয় করা জরুরি। তবে এটি কীভাবে এবং কবে থেকে দৃশ্যমান হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কারো কাছে। ইতোমধ্যে সরকার গঠনের আট মাস চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বেসরকারি খাতকে বড় ধাক্কা দিয়েছে সরকার।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে সবাই বেসরকারি খাতের গুরুত্বের কথা বলছেন। তবে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। বরং কিছু পদক্ষেপ বেসরকারি খাতকে কিছুটা টেনেই ধরছে, যা উদ্বেগজনক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads