• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
কাশ্মীর পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে সরকার

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

কাশ্মীর পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে সরকার

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৯

ভারতের সংবিধান থেকে অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেশটির সরকার তুলে নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি সরকার। তবে কাশ্মীর পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। কাশ্মীর ইস্যুর প্রভাব দেশে কেমন হতে পারে ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেদিকে নজর রাখছে সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণও চলছে।

বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বললেও দেশের জনগণ ও বিশেষ করে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে সরকার। কাশ্মীর ইস্যুতে দেশে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধাররা। তবে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাতে পারে। এ বিষয়ে সরকার সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে আছে।

সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, কাশ্মীরের ঘটনায় দেশের মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়তে পারে। মানুষ প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে। এরই মধ্যে নানা মাধ্যমে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তবে এর বড় কোনো প্রভাব দেশে পড়বে বলে মনে করেন না তারা। তাদের মতে, টুকটাক প্রতিক্রিয়া হবে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে কাশ্মীর নিয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই। তবে বাংলাদেশে কাশ্মীর নিয়ে নতুন রাজনীতি উসকানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা মূলত ভারতবিরোধী রাজনীতিই। একই কাজ পাকিস্তান করলেও যে রাজনীতি হয়নি, ভারত করেছে বলে তা উগরে উঠতে পারে। তবে এ রাজনীতি যাতে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ না নেয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের নীরব থাকাটাই যৌক্তিক বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এমনিতেই ঝামেলায় আছে। তাই কাশ্মীর নিয়ে সরকার নীরব ভূমিকাতেই থাকবে বলে তারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতের কাশ্মীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ। অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের কোনো প্রকার মন্তব্য বা কোনো প্রশ্ন করার এখতিয়ার নেই। তবে প্রতিবেশী হিসেবে আমরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সুদীর্ঘ ৭০ বছর পর তাদের সংবিধান থেকে কাশ্মীর নিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেছে। ভারত তাদের নিজের পার্লামেন্টে ও দেশটির জনপ্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশের আল্ট্রা ইসলামিকরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রয়েছে। কাশ্মীর এ দেশের সমস্যা নয় ও আমাদের বিষয়ও নয়। তবু সেটি নিয়ে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিতভাবে ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এ বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবে না বলে আমি মনে করি। তারপরও যারা পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করতে চায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিল। একই সঙ্গে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত বিশেষ মর্যাদাও। ৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোনো ভারতীয় রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। এ অনুচ্ছেদ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়। ওই অনুচ্ছেদ বিলোপ করার বিষয়টি ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর একটি। অনুচ্ছেদটির বিলোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হলেও এ বিষয়ে যাদের মতামত সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করার কথা ছিল-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ, তাদের বক্তব্যই উঠে আসেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads