• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিব্রত সরকার

বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) আহমেদ কবীর

ফাইল ছবি

সরকার

কর্মকর্তাদের নৈতিক স্খলন

বিব্রত সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না দেশের মাঠ প্রশাসনকে। আগে থেকেই রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ নেওয়া এবং অফিস ফাঁকির অভিযোগ। নতুন করে শুরু হয়েছে নৈতিক স্খলন। মাঠপর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নৈতিক স্খলনে বিব্রত সরকার। এরকম পরিস্থিতিকে কেন্দ্র থেকে পাঠানো কোনো নির্দেশনাই মাঠ প্রশাসনে কাজে আসছে না। ফলে বিব্রত হচ্ছে সরকার। এ জন্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা যারা মাঠে বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের ওপর কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে।

মাঠ প্রশাসন বলতে দেশের জেলাগুলোতে প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারকে বোঝানো হয়। এরা মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তবে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকই (ডিসি) বেশি পরিচিত। বর্তমানে ঘুষ-দুর্নীতির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়া বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সভায় মাঠ প্রশাসনের বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। ওই সভায় কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে স্বীকার করে বলেন, কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে মাঠ প্রশাসনে যেভাবে নজরদারির প্রয়োজন ছিল তা অনেকটাই কমে গেছে। আর এই ফাঁকে মাঠ প্রশাসন নীতি-নৈতিকতা ভুলে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। এতে মানসম্মান ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে।

ওই সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম মাঠ প্রশাসনকে ঠিকঠাক জায়গায় রাখতে বেশ কিছু মৌখিক নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদের কর্মকর্তাদের বলেন, কীভাবে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায় তার কৌশল নির্ধারণ করতে। ওই সভায় বিভিন্নজন বলেন, মাঠ প্রশাসনে বিশেষ করে জেলা প্রশাসক একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের যদি নৈতিক স্খলন ঘটে তাহলে আর থাকল কী?

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই সভার পর থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘আমলনামা’ হালনাগাদ করার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা কীভাবে কাজ করছেন, কতক্ষণ অফিসে থাকছেন, কতক্ষণ অফিসের বাইরে থাকছেন, অফিসের বাইরে থাকলে কী কী কাজ করছেন, অফিসে থাকলে নিজ চেয়ারে কতক্ষণ বসেন, খাস কামরায় কতক্ষণ থাকেন, কোন কর্মকর্তা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, নারী সঙ্গ পাওয়ার জন্য কোন কর্মকর্তা কী করেন, নারী সহকর্মীদের সঙ্গে কোন কর্মকর্তা কীভাবে আচরণ করেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে কারা কারা স্ত্রী বা স্বামী একসঙ্গে থাকেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তৈরি করে জমা দিতে।

এসব বিষয় প্রমাণিত হলে সহসাই জেলা প্রশাসক কিংবা মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তার নামের তালিকা জমা দেওয়া হবে। তারপর সরকার চাইলে আগামী মাস দেড়েকের মধ্যে বদলি প্রক্রিয়া চালু করা হতে পারে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ. গাফফার খান বলেন, এটুকু বলতে পারি, মাঠ প্রশাসনে আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি তদারকি বাড়ানো হয়েছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, মাঝখানে এই তদারকি বা নজরদারি কমে গিয়েছিল। সেটি এখন আরো বাড়ানো হয়েছে। এই নজরদারিতে যারা দোষী হিসেবে অভিযুক্ত হবেন তাদের কবে নাগাদ মাঠ প্রশাসন থেকে সরিয়ে আনা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নানারকম অব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। কেউ ফেসবুকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিষোদ্গার করছেন। কেউবা সরকারি টাকা কোষাগারে জমা না করে পকেটে রেখে দিচ্ছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তাকে মেয়াদ পূর্তির আগেই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাদের ওএসডি করা ছাড়াও কর্মকর্তাদের বার্ষিক বেতন বাড়ানোর পরিমাণ বন্ধ রাখাসহ তিরস্কারসূচক বিভিন্ন দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জনসেবা নিশ্চিত করতে এবং মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ছাড়া যাবে না। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তারা কর্মস্থল ছাড়তে পারবেন না। জরুরি প্রয়োজনে কর্মস্থল ছাড়তে হলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সূত্র বলছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যারা মাঠ প্রশাসনে আছেন, তাদের অনেকের পরিবার রাজধানীতে অবস্থান করে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষাসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধার উচ্চমান বজায় রাখতে মূলত এটি করেন তারা। এতে অনেক সময়ই জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। কাজের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা আনতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads