• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সরকার

প্রশাসনে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি

গতিশীলতা বাড়াতে জোরদার হচ্ছে তদারকি

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জনগণের কল্যাণে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে আরো কার্যকর এবং সব ধরনের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগুচ্ছে সরকার। পাশাপাশি প্রশাসনের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে আরো জনবান্ধব করার পাশাপাশি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

এদিকে সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনোভাবেই দেশের মাঠ প্রশাসনে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিষয়টি নিয়ে উচ্চমহলে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। এ ছাড়া আগে থেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি অফিস ফাঁকি এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি নৈতিক স্খলনের মতো ঘটনাও বাড়ছে। বিশেষ করে জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের যৌন কেলেঙ্কারি, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ তার বান্ধবীর ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা রাখা এবং বিয়েবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বড় ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, কেন্দ্র থেকে পাঠানো অনেক নির্দেশই মাঠ প্রশাসনে নিযুক্ত কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা যথাযথভাবে অনুসরণ করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ওই সভায় কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে স্বীকার করেছেন, কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে মাঠ প্রশাসনে নজরদারির ঘাটতি এবং তদারকির অভাব ছিল। ফলে মাঠ প্রশাসনের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে নানা অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে সরকার ও প্রশাসনের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম মাঠ প্রশাসনকে সঠিকভাবে দায়িত্বশীল রাখার জন্য বেশ কিছু মৌখিক নির্দেশও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কীভাবে এসব ইমেজের জন্য ক্ষতিকর এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায় সে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া ওই সভায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নৈতিক স্খলনের মতো ঘটনাগুলোতে প্রশাসনের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও অভিমত দেন কর্মকর্তারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওই সভার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘আমলনামা’ হালনাগাদের কাজ শুরুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা কীভাবে কাজ করছেন, কতক্ষণ অফিসে থাকছেন, কতক্ষণ অফিসের বাইরে থাকছেন, অফিসের বাইরে থাকলে কী কী কাজ করছেন, অফিসে থাকলে নিজ চেয়ারে কতক্ষণ থাকেন, খাস-কামরায় কতক্ষণ থাকেন, কোনো কর্মকর্তা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন কি না, নারী সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আচরণ, কর্মকর্তাদের মধ্যে কারা স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে কিংবা বিচ্ছিন্ন থাকেন—এসব বিষয়ের বিবরণ তৈরি করে জমা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ. গাফফার খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রশাসনে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনে আগের চেয়ে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, মাঝখানে এই তদারক বা নজরদারি একটু কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনকে আরো জনগণের জন্য কার্যকর ও কল্যাণমুখী করতে নিয়মিত তদারকি আরো বাড়ানো হয়েছে। তদারকিতে দোষী হিসেবে অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনিয়ম-নৈতিক স্খলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারি না-এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কথা বলতে পারেন। আমি শুধু বলতে পারি, প্রশাসনে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনতে নজরদারি আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রশাসনে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতকল্পে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ওপর কড়া নজরদারি ও তদারকি শুরু করা হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ঘুষ-দুর্নীতির পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়ম, অফিস ফাঁকি দেওয়া, অননুমোদন না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং কর্মকর্তাদের নারী ও যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নজরদারি ও তদারকি আরো বাড়ানো হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ হলে মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করা হতে পারে। এ ছাড়া অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের অনুমতি পাওয়া গেলে আগামী অক্টোবর মাস থেকে বদলি প্রক্রিয়া চালু হতে পারে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, মাঠ প্রশাসন বলতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারদের বোঝানো হয়। তারা মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

গত মাসে জামালপুর সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে অফিসের নারী কর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল হওয়া এবং তাহিরপুরের ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজের ঘটনায় প্রশাসনের ইমেজ অনেকাংশে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এদিকে, জনসেবা নিশ্চিত এবং প্রশাসনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিনা অনুমতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্মস্থল ছাড়তে পারবেন না। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও না। জরুরি প্রয়োজনে কর্মস্থল ছাড়তে হলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। প্রসঙ্গত, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত অনেক কর্মকর্তার পরিবার রাজধানীতে অবস্থান করেন। সন্তানদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে এটি করেন তারা। কিন্তু এতে জনসেবা অনেকাংশে বিঘ্নিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads