• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাদ পড়ছেন নিষ্ক্রিয়রা

সংগৃহীত ছবি

সরকার

মন্ত্রিসভায় রদবদলের আভাস

বাদ পড়ছেন নিষ্ক্রিয়রা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মন্ত্রিসভায় আবারো পরিবর্তন আসতে পারে শিগগির। দায়িত্ব পাওয়ার আট থেকে নয় মাসের মধ্যেও যথাযথ দক্ষতা প্রমাণ করতে না পারায় বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন। তাদের পরিবর্তে সাবেক, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত কয়েকজন মন্ত্রী যোগ হতে পারেন। কয়েক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলাকালে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য আলোচনা চলছে। তবে ওই অভিযানের অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হচ্ছে না।

দায়িত্ব পেয়েও ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকা, বিভিন্ন রকমের জনদুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখতে না পারা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও মন্ত্রিসভায় থাকায় দলে সময় দিতে না পারায় এ পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সফল ও জনপ্রিয় কয়েকজনও তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আগের মতো সময় দিতে পারছেন না। সরকার ও দলকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমান্তরালভাবে গতিতে এগিয়ে নেওয়া বা আরো গতিশীল মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে এবার বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়।

যদিও অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) বাণিজ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের, বিশেষ করে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের ‘প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে তিনজন মন্ত্রীর নাম আলোচনায় আছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে সতর্ক করে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রায় ছয় মাস আগে ঢাকার মতিঝিলের একটি টাওয়ারে অবস্থিত ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। ওই ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই দলকে সম্রাটের বাহিনী ঘিরে ধরে। সরকারের প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী সেদিন উল্টো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দলটিকে জেরা করতে শুরু করে। একজন মন্ত্রী ‘ক্ষুব্ধ’ সম্রাটকে শান্ত করেন। ওই মন্ত্রীর সম্রাটকে ‘প্রশ্রয়’ দেওয়ার বিষয়টি দল ও সরকারের অনেকের জানা আছে বলে সূত্র উল্লেখ করে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভার যাত্রার শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সবার প্রতি মাসের কার্যক্রম ও দক্ষতা মূল্যায়ন করছেন। অনেকের কাজের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট হলেও কয়েকজনের বিষয়ে তিনি খুশি নন। বিশেষ করে গত জুলাই মাসে চিকিৎসা করাতে বেশ কয়েকদিনের জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে গেলে গুজবজনিত সামাজিক অস্থিরতা সামাল দেওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। কোনো কোনো মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তখন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকেন বলেও অভিযোগ ওঠে। তাদেরকে বাদ দিয়ে অভিজ্ঞ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নতুন কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভাকে আরো গতিশীল করতে চায় সরকার।

সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে আবারো ফিরে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের নামও আছে এ তালিকায়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নামও আছে নতুন মুখের তালিকায়।

আলোচনায় আছেন সিরাজগঞ্জের একটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না। তিনিও মন্ত্রিসভায় যোগ হতে পারেন বলে জোর আলোচনা আছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মহাজোট ও ১৪ দলের জোটের শরিক দলের কেউ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও থাকলেও এবারো শরিকদের কেউ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

গত ১৩ জুলাই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরাকে প্রতিমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বর্তমান মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। একই দিন পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ইমরান আহমেদ। এর আগে সরকারের পথচলার প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্বে কাটছাঁট করা হয়।

সূত্র জানায়, আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে মন্ত্রিসভায় রদবদলের আলোচনা থাকলেও ওই মাসের মাঝামাঝি তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন শেষে দেশে ফিরলেও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাবেন। তিনি ভারত থেকে ফিরে এলেই মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে। সরকারের কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের মতে, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান মন্ত্রিসভার এক বছরের মূল্যায়ন করতে চান। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে আগামী জানুয়ারি মাসে হতে পারে মন্ত্রিসভায় রদবদল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রমতে, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন ও কে কে বাদ পড়ছেন। এবারের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলীয় পদ থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ঠাঁই পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন বা কারা সেখান থেকে বাদ পড়ছেন— তা একান্তই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দপ্তরই নির্ধারণ করবে, কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads