• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আমরা এখন সেরা সম্পর্কে

নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সরকার

বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমরা এখন সেরা সম্পর্কে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ ও ভারত বর্তমানে সর্বকালের সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের (আইবিবিএফ) উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আইবিবিএফের প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক উপভোগ করছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বও আপনাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্ল্যাটফর্মটি রয়েছে এবং আমরা আপনাদের প্রচেষ্টা সহজ করার জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে প্ল্যাটফর্মটির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক বৃহত্তর স্বার্থে উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার অনুরোধ করছি এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশ ও এই অঞ্চলকে আরো সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ীদের বংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। মোংলা, ভেড়ামারা ও মিরেরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই তিনটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আমাদের রপ্তানিযোগ্য খাতকে আরো প্রশস্ত করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি, যার মধ্যে প্রায় ১২টি তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে চারটি অঞ্চল তিনটি দেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বৈশ্বিক সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবৃদ্ধির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বৈশ্বিক এফডিআইর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন।

সংসদের প্রাসঙ্গিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে আরো বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ দেখতে চাই যেখানে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে এবং আমাদের মধ্যে বিদ্যমান উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যের ভারসাম্য যদিও এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ভারত এবং বাংলাদেশ এই দেশটির অষ্টম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ভারতে আমাদের রপ্তানিও গত বছরের প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সুতরাং অগ্রগতি দৃশ্যমান, তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

রাঁধুনিকে বলে দিয়েছি, রান্নায় পেঁয়াজ বন্ধ : ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পুরো উপমহাদেশে হেঁসেলে হেঁসেলে যে দুঃস্বপ্ন নেমে এসেছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে অনুষ্ঠানে রসিকতার সুরেই কটাক্ষ হানলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভবিষ্যতে রপ্তানি বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারত সরকার যেন প্রতিবেশীদের আগে থেকে জানিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগটুকু দেয়, সে আহ্বানও তিনি জানিয়েছেন।

চার দিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে তিনি হিন্দি ভাষায় বলেন, পেঁয়াজ মে থোড়া দিক্কত হো গিয়া হামারে লিয়ে। মুঝে মালুম নেহি, কিউ আপনে পেঁয়াজ বন্ধ কর দিয়া! ম্যায়নে কুক কো বোল দিয়া, আব সে খানা মে পেঁয়াজ বন্ধ কারদো (পেঁয়াজ নিয়ে একটু সমস্যায় পড়ে গেছি আমরা। আমি জানি না, কেন আপনারা পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলেন। আমি রাঁধুনিকে বলে দিয়েছি, এখন থেকে রান্নায় পেঁয়াজ বন্ধ করে দাও)।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতার সাড়া দেন হাসি আর করতালিতে।

কেবল বাংলাদেশ নয়, কাঠমান্ডু থেকে কলম্বো- দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই পেঁয়াজের জোগানের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয় অনেকাংশে।

বৃষ্টি আর বন্যায় এবার পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় ভারত সরকার গত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছায়। প্রতিদিনের রান্নায় বহুল ব্যবহূত এই সামগ্রীর এমন দামে ক্রেতাদের মনে তৈরি হয় উদ্বেগ, বাজারে তৈরি হয় অস্থিরতা।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পাশাপাশি অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করতে পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান শুরু করে। টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে ট্রাকে করে ‘ন্যায্য মূল্যে’ পেঁয়াজ বিক্রি হয়।

এদিকে গতকাল বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আগে থেকে নোটিশ দিলে বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে কেনার ব্যবস্থা করতে পারত। ভবিষ্যতে এমন কিছু করলে আগে জানালে ভালো হয়।

ভারতের শিল্প ও রেলপথ মন্ত্রী পীযূস গয়াল, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, অ্যসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অব ইনডিয়ার (অ্যাসোচাম) সভাপতি বালকৃষাণ গোয়েঙ্কাসহ দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads