• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইউএনওরা পাচ্ছেন কোটি টাকার পাজেরো

সংগৃহীত ছবি

সরকার

ইউএনওরা পাচ্ছেন কোটি টাকার পাজেরো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দুই হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার ৫টি প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকার ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরই আওতায় ইউএনওদের জন্য ৫০টি পাজেরো জিপ ক্রয় এবং চট্টগ্রামে রেলের পরিত্যক্ত জমিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৫০০ আসনের হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত এসব প্রস্তাবসহ মোট পাঁচটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে  বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মামুন হুমায়ূন, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে, প্রায় কোটি টাকা মূল্যের পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স জিপ গাড়ি পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০টি গাড়ি কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ৫০টি জিপ গাড়ির কেনার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গাড়ির দাম কত-এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু না বললেও বৈঠকে উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিটি গাড়ি কিনতে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ ব্যয় হবে ৯৪ লাখ টাকা।  এ হিসাবে ৫০টির মূল্য দাঁড়াবে ৪৭ কোটি টাকা। এতে আরো বলা হয়, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সরকারি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জিপ গাড়ি ক্রয় বাবদ বরাদ্দ দিয়ে আসছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, পুরনো জিপগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় তা মেরামত করে প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার ফলে কার্যক্রমের গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিস্থাপক হিসেবে ৫০টি জিপ গাড়ি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ করা সময়সাপেক্ষ। এজন্য রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে ইউএনওদের জন্য ৫০টি পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স জিপ গাড়ি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনা হবে।

বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হলো চট্টগ্রামে রেলের পরিত্যক্ত জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৫০০ আসনের হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ স্থাপনে একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৮৬ কোটি টাকা। ছয় একর জায়গায় নতুন এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে জরুরি প্রয়াজনে ৫ বছরে ১৫ লাখ পার্সোনালাইজড ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স কেনার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া মহেশখালী, মাতারবাড়ী ও বাঁশখালী এলাকায় নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একটি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন প্রস্তাব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপনে একটি প্রস্তাবও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রোডিংটন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৩৯০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের বাজারমূল্য ২৫৫.৫৫ ডলার। প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি।

বৈঠকে গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের (ইডিসিএল) তৃতীয় প্রকল্প সিভিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড প্লামবিং ওয়ার্কের অন্তর্গত নন-টেন্ডার আইটেমের  ভেরিয়েশন কাজের প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ চলাকালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজাইন, ড্রয়িং অনুযায়ী কাজের উপযোগিতা, সৌন্দর্য ও গুণগতমান বৃদ্ধি করাসহ কিছু নন-টেন্ডার আইটেমের কাজ যুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ ৫ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল চুক্তিতে ছিল ৯৭ কোটি ২১ হাজার ৫১৫ টাকা। প্রকল্পের সর্বমোট ব্যয়  ১০২ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইডিসিএল। বৈঠকে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া-আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটির পূর্ত কাজের প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  এতে মোট হবে ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এছাড়া বৈঠকে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব স্ট্যাটিস্টিকস (এনএসডিএস) ইমপ্লামেটেশন সাপোর্ট প্রজেক্টের ‘টিউনিং পার্টনারশিপ ফর ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব স্ট্যাটিস্টিকস (এনএসডিএস) ইমপ্লামেটেশন সার্পোট প্রজেক্ট’ শীর্ষক পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবের  অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৯৭৫ টাকা।

রাজস্ব আদায় কমেনি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমেনি।  গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আমরা লক্ষ্যমাত্রা বেশি করে ধরি তাই লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে অর্জন কিছুটা কম।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি হিসাব হবে গত বছরেরর অর্জনের চেয়ে এ বছর যদি কম হয় তাহলে দ্যাট ইজ নেগিটিভ  গ্রোথ। আর যদি গত বছরের তুলনায় বেশি করি তাহলে পজিটিভ  গ্রোথ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় বড় আকারের, যাতে এটি অর্জন করার জন্য সবাই চেষ্টা করে। রাজস্ব আহরণ গত বছরের তুলনায় এ বছর কমেনি।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে প্রাইভেট ব্যাংকের ডাইরেক্টর, এমডি, ডিএমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে অ্যাপ্রুভ করলে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনে এ-সংক্রান্ত ধারা সংযুক্ত হচ্ছে। এটি কি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ আইনের খসড়াটি আমার কাছে এলে বলতে পারব। তিনি বলেন, যদি এটি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে ভালো হবে। সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এভাবেই অনুমোদন করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যমান ব্যাংকিং কোম্পানি আইনে কিছু অ্যামেন্ডমেন্ট আনতে হবে, পুরো আইন চেঞ্জ করতে হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads