• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সরকার

রোহিঙ্গা ইস্যু

বর্ষার আগেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০২১

চলত বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভীতি দূর ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে বলা হবে।

এছাড়া নিরাপত্তা, কোথায় ফিরে যাবে, জীবিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে রোহিঙ্গাদেরকে জানানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে ১৯ জানুয়ারি বৈঠকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের মূললক্ষ্য প্রত্যাবাসন এবং বাংলাদেশ বাস্তবসম্মত পন্থায় অগ্রসর হবে। বর্ষার আগেই প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।

তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা জরুরি। এজন্য আমরা এর আগে প্রস্তাব করেছিলাম, একদল রোহিঙ্গাকে রাখাইনে নিয়ে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখাতে, যাতে করে তারা এসে অন্যদের বলতে পারে। প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থা আছে। পরবর্তীতে চীনের আগ্রহে ত্রিপক্ষীয় একটি মেকানিজম তৈরি করা হয়েছে। উভয়ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি আছে। এই অগ্রগতিকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়েও কথা বলতে আগ্রহী আমরা।

প্রাথমিকভাবে পরিবার ও গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসনের ওপরে জোর দেওয়া হবে। বিক্ষিপ্তভাবে অনেক রোহিঙ্গাই ফিরতে চাইবে না। এর জন্য যাচাই-বাছাই পরিবার ও গ্রামভিত্তিক হলে সবচেয়ে সুবিধা হবে। একটি গ্রামের যতজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের একসঙ্গে ফেরত পাঠাতে চাই। এটা করতে পারলে ওই গ্রামের প্রতিটি পরিবার যেতে উৎসাহী হবে। তাদের দেখে অন্য গ্রামের লোকজনও একত্রিত হয়ে ফিরে যেতে আগ্রহ দেখাবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গত তিন বছরে পরিবার ও গ্রামভিত্তিক আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে সরবরাহ করেছে। এরমধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার যাচাই-বাছাই করেছে।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার আলোচনায় আমরা জাপান, ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের। যে কেউ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে আমরা স্বাগত জানাবো। কোনো দেশ প্রত্যাবাসনে সহায়তা করলো এবং অন্য কোনো দেশ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবিকা বা বাড়িঘর তৈরি করে দিলো-এভাবে বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন দেশ সহায়তা করলে সবচেয়ে ভালো হয়।

প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয় ২০১৮ সালে। মন্ত্রীপর্যায়ে দুই দফা বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক, বাংলাদেশে চীন ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল এক বছর আগে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগষ্টের শেষ সপ্তাহে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্বািচারে মানুষ হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় অন্তত সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এছাড়া আগে থেকেই দেশে সাড়ে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গ কক্সবাজার ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে। সম্প্রতি কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের স্থানান্তর করা হয়েছে। টেকনাফের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। সেখানে তাদের জন্য উন্নতমানের ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে অর্থাৎ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads