• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

শেষ পৃষ্ঠা

আদালতের নির্দেশের ১৯ মাসেও দখলমুক্ত হয়নি কর্ণফুলী 

অর্থের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে জেলা প্রশাসন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৮

কর্ণফুলী নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে দুই সহস্রাধিক স্থাপনা। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ জারি করেছিলেন। কিন্তু ১৯ মাস আগের হাইকোর্টের এ আদেশ আজ পর্যন্ত প্রতিপালিত হয়নি। এ অবস্থায় কর্ণফুলী দখলের অবৈধ তৎপরতা দিন দিন বেড়েছে। আর দখলদারদের অপতৎপরতায় কর্ণফুলী ক্রমশ তার নাব্য হারাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ধরনের এ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ প্রয়োজন। অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চার মাস আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বরাদ্দ মেলেনি। যে কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর দুই তীর দখল করে তৈরি হয়েছে শত শত স্থাপনা। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের শিল্প কারখানা। বড় বড় একাধিক শিল্প গ্রুপ তাদের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য নদী দখল করে বানিয়েছে জেটি। জাহাজ তৈরির কারখানা, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, ছোট-বড় জাহাজ মেরামতের ডকইয়ার্ড, বাজার, বালির আড়ত, বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে কর্ণফুলীর দুই পারে। সরকারি কয়েকটি সংস্থারও স্থাপনা রয়েছে কর্ণফুলীর তীরে।

কর্ণফুলীর অবৈধ দখল সংক্রান্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি ভূমি সার্কেলের পাশাপাশি আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও পটিয়া অংশে অবৈধ দখল ও দূষণ হচ্ছে। প্রতিবেদনে বাকলিয়া থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ২ হাজার ১১২ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। পটিয়া (বর্তমানে কর্ণফুলী উপজেলা) এলাকায় নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ১৮টি শিল্প কারখানা। এ ছাড়া বোয়ালখালী এলাকায় সাতটি কারখানা, একটি বাজার এবং আনোয়ারা এলাকায় চারটি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত দখল ও দূষণে কর্ণফুলী নদী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পাশাপাশি এর জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কর্ণফুলীতীরের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইতঃপূর্বে কর্ণফুলীর দুই তীরে ২ হাজার ২১২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু রাষ্ট্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া বাকিগুলো উচ্ছেদের আদেশ রয়েছে হাইকোর্টের। এ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে গত ২৫ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার ও উচ্ছেদ কার্যক্রমের জন্য প্রাথমিকভাবে এই বাজেট নির্ধারণ করা হলেও তা আরো বাড়তে পারে। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখল, ভরাট ও নদীতে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য ২০১০ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এ পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনায় কর্ণফুলীর দুই তীরে জরিপ চালিয়ে দুই সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এ জরিপ রিপোর্ট ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ৯০ দিনের মধ্যে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদেশ দেন। এর মধ্যে অপসারণ করা না হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে তা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads