• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রাজধানীর পশুর হাটে ক্রেতার অপেক্ষা

নৌপথে রাজধানীর বাজারগুলোয় আসছে কোরবানির পশু। ছবিটি গতকাল বাদামতলী ঘাট থেকে তোলা

ছবি -বাংলাদেশের খবর

মহানগর

বন্দরনগরীতে কেনাবেচা জমজমাট

রাজধানীর পশুর হাটে ক্রেতার অপেক্ষা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৮

পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুদিন। মুসলমানদের অন্যতম এ ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটগুলোতে এখন পশুর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরবরাহের চাপে দুই নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাটগুলো নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশে ছড়িয়েছে। তবে গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের হাটগুলোয় জমজমাট বেচাকেনা হলেও রাজধানীর চিত্র ছিল ভিন্ন। বেশিরভাগ মানুষ এ-হাট ও-হাট ঘুরেছেন দরদাম যাচাই করতে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীর হাটগুলোতে আগামীকাল সোমবার শুরু হবে জমজমাট বেচাকেনা, যা চলবে আগামী বুধবার ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। এদিকে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও গত বছরের তুলনায় গরুর দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। ব্যাপারি ও খামারিরা বলছেন, খড়-ভুসিসহ অন্যান্য পশুখাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় গরুর দাম কমই রয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যয় বেড়েছে এবং চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, যার প্রভাব পড়ছে কোরবানির বাজারে। গতবারের মতো ভারত থেকে গরু না আসায়ও দাম বেশি পড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে কোথাও কোরবানির পশুর কমতি লক্ষ করা যায়নি। সে তুলনায় ক্রেতা ছিল কম। অধিকাংশই লোকই ব্যস্ত ছিল দামের ধারণা নিতে। ফলে অনেক হাটে চাহিদার তুলনায় বেশি গরু এসেছে বলে ধারণা করছিলেন ব্যাপারি ও খামারিরা। তারা জানান, গত বৃহস্পতিবারের পর প্রতিদিনই বাড়ছে পশুর হাটে আগত ট্রাক। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁসহ দেশের প্রায় সব এলাকা থেকেই কমবেশি গরু আসছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এবার গরুর সরবরাহে কোনো কমতি থাকবে না।

জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও এ বছর সারা দেশে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ৭১ লাখ। আর শুধু রাজধানীতেই প্রায় ২০ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার বেশিরভাগ গরু ও মহিষ। এ কারণে বড় ও সেরা পশুর বাজার হিসেবে দেশের ব্যাপারি ও খামারিদের কাছে বেশি পছন্দ রাজধানীর হাটগুলো।

বিক্রেতারা গরুর দাম বেশি চাইছেন বলে গতকাল শনিবার অভিযোগ করেন আফতাব নগর-মেরাদিয়ায় অস্থায়ী পশুর হাটে আসা মহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, গত বছর ৫৪ হাজার টাকায় যেমন গরুটা কিনেছিলাম, এ বছর তেমন গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। বাজার ঘুরেও গত বছরের দামে কোনো গরু কিনতে পারছি না। ব্যাপারিরা দামই ছাড়তে চাচ্ছেন না। এ হাটে বগুড়া থেকে গরু নিয়ে আসা নয়ন মিয়া বলেন, এবার গত বছরের মতো ভারতের গরু আসেনি। তাই দামও বেশি। আমি নিজেও ১২টি গরু এনেছি। মনে হচ্ছে, গত বছরের থেকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।

এদিকে ভালো বাজার যাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী ঢাকায় গরু আনছেন বলে জানিয়েছেন জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যাপারি। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ঈদ আসলে অনেক চাকরিজীবীও গরুর ব্যবসা করেন। এবারেও ব্যতিক্রম হয়নি। তারা বিভিন্ন এলাকার খামার থেকে গরু আনছেন। সেসব গরু বিভিন্ন বেপারির মাধ্যমেই বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, ঢাকার হাট এবার ভালো যাবে, এমন খবরে প্রতিদিন গরুর সংখ্যা বাড়ছে। এখন এ হাটে যত গরু আছে, কাল তার দ্বিগুণ হবে।

গাবতলী হাটের কয়েকজন খামারি জানান, এখন যারা হাটে আসছেন, তারা দরদাম যাচাই করছেন। খামারিরাও বাজারদর দেখছেন। বাজার আসলে সোমবার নাগাদ জমবে। সেদিন আর পরের দিনই দুই-তৃতীয়াংশ গরু বিক্রি হবে। এ কারণে এখন কেউ হুটহাট বেচবে না।

খামারিরা আরো জানান, দীর্ঘদিন ঢাকার হাটে পশু রাখার মতো সুব্যবস্থা না থাকায় তারা আগেভাগে বেশি পশু আনছেন না। এখন হাটে নমুনা হিসেবে কিছু জড়ো করেছেন। বাকি গরু রাজধানীর হাটগুলোর আশপাশে সাভার, আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার অস্থায়ী খামারে রাখা আছে। মিজান নামে এক খামারি গতকাল বলেন, আজ ৬টা গরু এনেছি। দাম ভালো পেলে আরো ১২টা নিয়ে আসব। প্রায় সব ব্যবসায়ীই গরু কিনে এভাবে আশপাশে মজুত রেখেছেন বলে জানান তিনি।

গাবতলী ঘুরে আরো দেখা গেল, দাম বাড়তির কারণে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৬৫ থেকে এক লাখ। বড় গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় এ পশুর হাটে গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একটি মাত্র উট উঠেছিল। দাম হাঁকা হচ্ছিল ১৫ লাখ টাকা। সঙ্গে বেশ কিছু দুম্বা উঠেছে এ হাটে। এগুলোর দাম হাঁকা হচ্ছিল এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত।

কয়েকজন খামারি জানান, ৫৫ কেজির এক বস্তা গমের ভুসির দাম এখন প্রায় দুই হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া ৩৫ কেজির ছোলার খোসার বস্তা এক হাজার থেকে বেড়ে দেড় হাজার টাকা হয়েছে। চালের কুঁড়া, খৈল, চিটাসহ সব পশুখাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি হিসাবে নিলে পশুর দাম কোনোভাবেই বাড়েনি।

চট্টগ্রাম : নগর-গ্রাম সর্বত্র জমে উঠেছে পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা বেশি থাকায় বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দামও কিছুটা বেশি। গতকাল নগরীর বৃহত্তম পশুর বাজার সাগরিকা হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন আকারের প্রচুর গরু এনেছেন বেপারিরা। দেশি গরুর পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের গরুও উঠেছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি প্রচুর; বেচাকেনাও চলছে জমজমাট। হাটের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর জানান, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে বাজারে। তবে ভারত ও মিয়ানমারের গরু এবার কম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের গরুর ক্রেতা বেশি; দামও চড়া। সে তুলনায় বড় আকারের গরুর দাম কম। তবে ক্রেতারা বলছেন, প্রচুর সরবরাহ থাকলেও সব ধরনের গরুর দামই গতবারের চেয়ে বেশি। প্রতিটি গরুই ১০-২০ হাজার টাকা বেশি পড়ছে। অবশ্য বিক্রেতারা জানান, গরু পরিবহনে এবার ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। একই সঙ্গে পথে পথে চলছে চাঁদাবাজি। এ বাড়তি অর্থ ব্যয়ের প্রভাব পড়ছে গরুর বাজারে। ইজারাদাররা জানান, নগরীর সব কয়টি বাজারেই ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বেচাকেনা চলবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads