• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চলছে লেগুনা, চালকের আসনে কিশোরও

চালকের আসনে কিশোর

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

চলছে লেগুনা, চালকের আসনে কিশোরও

# নিষিদ্ধের ব্যাপারে জানে না বিআরটিএ # পুলিশ ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মো. সাকিব, ১০-১২ বছর বয়সী শিশুটি ‘শ্যামলী, শিয়া মসজিদ, আদাবর’ চিৎকার করে যাত্রী ডাকছে। সাকিব মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বেড়িবাঁধ থেকে শ্যামলী পর্যন্ত চলাচলকারী হিউম্যান হলারের (লেগুনা) হেলপার (সহকারী)। ঢাকা উদ্যান বেড়িবাঁধের ঢালে দাঁড় করানো লেগুনাটিতে তখনো দুই-তিনটি সিট খালি। তখনো চালকের আসনে বসেনি সাকিবের ওস্তাদ (চালক)। লেগুনাটি যাত্রী পূর্ণ হতেই সাকিব ওস্তাদ বলে ডাক দিল তার চালককে। পাশের চায়ের দোকানে সিগারেট খেতে থাকা আরেক কিশোর এসে বসল চালকের আসনে। তার নাম শফিকুল ইসলাম। শফিকুলের ভাষ্য মতে, বয়স ১৬ বছর। এখনো তার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বয়স না হলেও ব্যস্ততম নগরীতে লেগুনার চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় দেড় বছর ধরে। তারও আগে দুই বছর হেলপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে।

শফিকুলের পাশের সিটে বসে চলতে চলতে কথা। সে জানাল, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বেশ সমস্যা হয়েছে তাদের (কিশোর চালক)। রাস্তায় নামলেই পুলিশ মামলা দিয়েছে। ওই সময়টিতে তার কোনো আয় ছিল না তা নিয়েও আক্ষেপ ছিল তার। বয়স কম তাতে কী, ড্রাইভিং জানলেই তো হলো এমন যুক্তি দেখাল শফিকুল। চলতি মাসে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করায় প্রথম দুই দিন সমস্যা হয়েছে।

শফিকুল বাংলাদেশের খবরকে জানায়, নিষিদ্ধ করার পর মালিক পক্ষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে আবারো চালু করেছে লেগুনা চলাচল।

শফিকুলের লেগুনা থেকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট স্ট্যান্ডে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই দেখা যায়, মিরপুর-১ নম্বর রুটের লেগুনাগুলোতেও চলছে যাত্রী ডাকার হাঁক। ছিল শিয়া মসজিদ-মহাখালী রুটেও লেগুনার চলাচল। সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ঠিক আগের মতোই চলছে কৃষি মার্কেট ফার্মগেট রুটের লেগুনার চলাচল। নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও লেগুনার এমন চলাচল তো আছেই উল্টো অধিকাংশ লেগুনার চালকের আসনে ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোর।

সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাজধানীতে হিউম্যান হলার (লেগুনা) চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত ৩ সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এ সময় তিনি লেগুনা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। ঘোষণার পরপরই রাজধানীর অধিকাংশ রুটে দিনের বেলায় লেগুনা চলাচল বন্ধ থাকলে চলেছে রাতে। ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানী জুড়ে ট্রাফিক পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থানের কারণে লেগুনা চলাচল চোখে না পড়লেও ৬ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাভাবিক হতে থাকে রুটগুলো। আর গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন অধিকাংশ রুটেই চলেছে লেগুনা।

এদিকে রাজধানীতে চলাচলকারী অধিকাংশ লেগুনারই নেই রুট পারমিট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা রুটগুলোর মতো বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া অনুমোদিত রুটেও লেগুনা চলাচল বন্ধ করে দেয় ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। তবে এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অবগত করা হয়নি বিআরটিএকে।

এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে আবারো লেগুনা চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পেছনে বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা না থাকাটাই কারণ হিসেবে বলছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোর চালকদের ব্যাপারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে বলেও জানায় তারা।

বিআরটিএ’র দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঢাকাতে মোট নিবন্ধিত হিউম্যান হলারের সংখ্যা ৫ হাজার ১৫৬টি, যা ২০১০ সালে ছিল ২ হাজার ৭১৮টি। বিআরটিএ’র পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অনুমোদিত রুট পারমিটের বিপরীতে নতুন লেগুনার নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এসব লেগুনা অননুমোদিত রুটে চলাচল করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সম্প্রতি ঢাকা শহরের মধ্যে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধের ব্যাপারে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অফিসিয়ালি আমরা কিছুই জানি না। সড়কে যানবাহনের নিবন্ধন, রুট পারমিট দেওয়ার দায়িত্ব বিআরটিএ’র, কিন্তু শৃঙ্খলার প্রধান দায়িত্বটা তো ট্রাফিক বিভাগ করে থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও গবেষণা) গোবিন্দ চন্দ্র পাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, লেগুনা বন্ধের ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনারের যে ঘোষণা সেটা ঢালাওভাবে দেখার কিছুই নেই। ঢাকার মধ্যে বিআরটিএ’র অনুমোদিত কিছু রুটে লেগুনা চলাচল করে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা মানেই এক দিনের মধ্যে করা হবে তাও না। মাসব্যাপী কর্মসূচি চলছে। বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করেই লেগুনা বন্ধ করা হবে। আর আমাদের মূল অভিযান ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে। আর লেগুনার ক্ষেত্রে এই দুটো বিষয়ই বেশি দেখা যায়। অধিকাংশ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক। যাদের লাইসেন্স পাওয়ারই যোগ্যতা হয়নি। যাদের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা ঘটছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads