২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত অখন্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির গৌরব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে হাজারো তরুণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। জাপান ও অক্ষশক্তির অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সেই যুদ্ধ পরিচালনায় ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে গঠিত হয় ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার ‘আর্জি-হুকুমত-এ আজাদ হিন্দ’।
বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণে আজাদ হিন্দ স্বাধীনতার লক্ষ্যে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে না পারলেও সেই সংগ্রামের অভিঘাতেই ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এ বছর আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এদিন নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আজাদ হিন্দ দিবস। একইভাবে ঢাকায় গ্লোবাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফর হিস্ট্রি, হেরিটেজ অ্যান্ড ফ্রিডম স্ট্রাগল (জিজেএ)’র উদ্যোগে পদযাত্রা ও শহিদ স্মরণ কর্মসূচি পালিত হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের শহিদ সেনানিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা করে রাজনীতিক, সাংবাদিক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রা শেষে কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে গিয়ে এক স্মরণ আলোচনায় অংশ নেয় তারা। আয়োজক সংগঠন জিজেএ’র উপদেষ্টা ড. ফররুখ আহমদ ফারুকের সভাপতিত্বে স্মরণ আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক, গবেষক ও নেতাজিপ্রেমীরা।
জিজেএ’র সাধারণ সম্পাদক ও নেতাজি গবেষক আশরাফুল ইসলাম স্মরণ আলোচনায় বলেন, ‘এই আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা হচ্ছে-আমরা যে ভূখন্ডে বাস করি সেটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পাই। কিন্তু তারও আগে আমরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা চরমভাবে নিষ্পেষিত হয়েছি। দুই’শ বছরের সেই শৃঙ্খল ভাঙতে আমাদের পূর্বপ্রজন্ম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছেন। স্বাধীনতার সেই চেতনা আমাদেরকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণিত করেছে। সেই চেতনা আর আত্মত্যাগকে আমরা ভুলে যেতে পারি না।’
‘শেকড়ে প্রোথিত এই মুক্তি সংগ্রামের চেতনাই আমাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত সোপানে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন নেতাজি ও আজাদ হিন্দ ফৌজের গৌরবগাঁথা এবং দেশের জন্য তাদের আত্মত্যাগকে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রজন্মকে দেশপ্রেমে জাগ্রত করতেই আমাদের পেছনে ফিরে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাসকেও আমাদের ধারণ করতে হবে-অন্তর্ভূক্ত করতে হবে পাঠ্যপুস্তকে’-বলেন জিজেএ সাধারণ সম্পাদক।
স্মরণ আলোচনায় অন্যান্যের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন-সংগঠনের সহ-সভাপতি ও দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র’র সম্পাদক অয়ন আহমেদ, ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান কাজল, জিজেএ’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক-গবেষক ওমর ফারুক শামীম, জিজেএ’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রুবেল প্রমূখ। বিজ্ঞপ্তি