• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ঢাকায় হোটেল ব্যবসা চাঙ্গা

ঢাকায় হোটেল ব্যবসা চাঙ্গা

মহানগর

ঢাকায় হোটেল ব্যবসা চাঙ্গা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরুর আগে থেকে থাকার জায়গা মিলছে না রাজধানী ঢাকার আবাসিক কোনো হোটেলে। বিশেষ করে ফকিরাপুল, কাকরাইল, গুলিস্তান, পল্টন এবং আশপাশের হোটেলগুলো পূর্ণ থাকছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীতে।

আবাসিক হোটেল ছাড়া ওইসব এলাকার খাবারের হোটেল, ফুটপাথ বা চায়ের দোকানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় আসেন এসব নেতাকর্মী। নিজেদের দলের প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এদের এ অবস্থান থাকবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনী এলাকা ও রাজধানীর মধ্যে যাওয়া-আসা বেড়েছে কয়েকগুণ। তাদের সঙ্গে থাকছে কয়েক ডজন কর্মী। এতে রমরমা পরিবহন ব্যবসাও। গত দু’সপ্তাহ ধরে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা বিমানে আসন মেলা দায়। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, এ পর্যন্ত বড় কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকায় সুবাতাস লেগেছে দেশের আরো কিছু ব্যবসায়। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সুবিধার জন্য বেড়েছে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের বিক্রি। প্রতিদিন শতকোটি টাকার লিফলেট ব্যানার ফেস্টুনসহ প্রচারণা সামগ্রীর অর্থ যোগ হচ্ছে প্রিন্টিং খাতে। রাজধানীসহ সারা দেশে ভিড় বেড়েছে শপিং মল, বিপণিবিতানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশজুড়ে নানা আয়োজনে ব্যস্ত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এবারের নির্বাচন অত্যন্ত উৎসবমুখর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। সব ধরনের সহিংসতা থেকে বেরিয়ে এ নির্বাচনের গুণগত উন্নয়ন হয়েছে। এতে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ব্যবসার সর্বত্র একটা চাঙ্গা ভাব এসেছে। নির্বাচনে যে অঘোষিত দেনদেন হবে সেটাও অর্থনীতির সঙ্গে যোগ হবে। সব মিলে অর্থনীতির জন্য এটা ভালো দিক।

পণ্য কেনাবেচা ছোট-বড় ব্যবসায় নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে সরকারের শেষ মুহূর্তে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। শেষ সময়ে উন্নয়ন দেখাতে ব্যস্ত সময় পার করছে সরকারি দল। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীরা প্রতিদিন সারা দেশে নতুন নতুন স্থাপনা উদ্বোধন করে গেছেন। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের একনেকে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৯ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ এখন চলছে। নির্বাচনে ভোট টানতে এসব নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। তার একটা ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ছে। অল্প কথায় এ কারণে অর্থনীতিও গতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলা যায়।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাজারে নগদ অর্থের সরবরাহ বেড়ে গেছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সরকারি খাতে অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি দেশে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নগদ টাকা খরচ করছেন নানাভাবে। এ ছাড়া প্রবাসীসহ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে টাকার জোগান দিচ্ছেন অনেকে। ফলে অর্থনীতিতে বাড়তি টাকার জোগান হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাজারে টাকার প্রবাহ বা ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ (এম ২) বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাজারে টাকার প্রবাহ ছিল ১০ লাখ ২৮ হাজার কোটি। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকায়। যা গত আগস্টে ছিল ১১ লাখ ২৮ হাজার কোটি, জুলাইয়ে ১১ লাখ ৬ হাজার কোটি, জুনে ১১ লাখ ১০ হাজার কোটি এবং মে মাসে ছিল ১০ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ব্যাংক থেকে যেমন টাকা বের হচ্ছে, তেমনি ব্যাংকের বাইরে থাকা মজুত অর্থেরও সঞ্চালন বেড়ে যাচ্ছে। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলোতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন ঋণখেলাপি প্রার্থীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের নামে থাকা খেলাপি ঋণ সমন্বয় করতে ভিড় করছেন ব্যাংকে।

গত অক্টোবরের শুরুতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে বছর শেষে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মনে রেখে নির্বাচন কমিশনের জন্য সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ খরচ করতে পারবেন ২৫ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে হাতেগোনা কয়েকজন বাদে কোনো প্রার্থীর ব্যয় কোটি টাকার নিচে থাকবে না। সে হিসাবে প্রতি নির্বাচনী আসনে যদি অন্তত পাঁচজন প্রার্থী এমন ব্যয় করেন, তাহলে ৩০০ আসনে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর এবার মনোনয়ন ফরম কিনতে সারা দেশের প্রার্থীদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads