• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নিয়মিত কাজে ভাটা দুই করপোরেশনে

লোগো দুই সিটি করপোরেশনে

মহানগর

জাতীয় নির্বাচনের আমেজ

নিয়মিত কাজে ভাটা দুই করপোরেশনে

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০১ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় নির্বাচনের উত্তাপে গরম সারা দেশ। ঘরে-বাইরে, অফিসপাড়াতে মুখ্য আলোচনার বিষয় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভাটাও পড়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের বাইরে সড়ক, ড্রেনেজের মতো অবকাঠামো উন্নয়নের অধিকাংশ কাজই মাঝপথে বন্ধ হয়ে পড়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত বর্ষার মৌসুম থাকায় এ ধরনের উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়া হয় সেপ্টেম্বর থেকে। তবে নভেম্বরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ শুরু হওয়ায় এসব কাজ ‘অজ্ঞাত’ কারণে বন্ধ রয়েছে। বাজেট সংস্থান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগসহ বেশকিছু প্রকল্পের ৬০ ভাগ শেষ হলেও নভেম্বর থেকে ভাটা পড়েছে কাজের। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছর মার্চ মাসে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি খুঁড়ে ড্রেনেজ কাজে হাত দেয় উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। বিদ্যমান সড়কের উচ্চতার তুলনায় এক থেকে দেড় ফুট উঁচু ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করায় নতুনভাবে শুরু করতে হয় এই সড়কের নির্মাণকাজ। তবে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল এই প্রকল্পের কাজ। সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা গত এক মাস যাবৎ শুধু কার্পেটিং করে ফেলে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান আবাসিক এলাকাতেও। এসব এলাকায়ও সড়কগুলোতে কোথাও কার্পেটিং, কোথাওবা খণ্ড খণ্ডভাবে বিটুমিনের প্রলেপ দিয়েই স্থগিত রাখা হয়েছে প্রকল্পের বাকি কাজ।

একই চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাতেও। রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতেও চলতি বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ। তবে যান চলাচলের জন্য দায়সারাগোছের সড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ করা হলেও অনেক জায়গাতেই রাস্তা ভাঙতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সড়কের মধ্যে থাকা ম্যানহোলগুলোর পাড় ভেঙে রাস্তা দেবে গেছে কয়েক জায়গায়।

বর্ষার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মোহাম্মদপুর এলাকার মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি, লিমিটেড, শেখেরটেক, মনসুরাবাদ, রায়েরবাজার, চান মিয়া হাউজিংয়ের মতো আবাসিক এলাকাগুলোর ভেতরের সড়কের সংস্কারের কথা থাকলেও তা কার্যত স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।

সিটি করপোরেশন দুটোর সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকেই এসব প্রকল্পের অনুকূলে অর্থসংস্থান করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দরপত্র আহ্বান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মতো প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পগুলোর গুটি কয়েক শতভাগ শেষ হলেও, বাকিগুলো ৪০ থেকে ৬০ ভাগ কাজ করেই বন্ধ রয়েছে। আর কাজ কেন বন্ধ রাখা হয়েছে এমন তদারকিও নেই দফতরগুলোর। দফতর ও সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ ঠিকাদারই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের তুলনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগ থাকায় স্থগিত রয়েছে এসব কাজ। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের এসব কাজ দেখভালের কথা থাকলেও নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় তাদেরও পাওয়া যাচ্ছে না দফতর কিংবা স্ব-স্ব এলাকাতেও।

ডিএনসিসি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব তার এলাকায় থমকে থাকা কোনো উন্নয়ন কাজ আছে কি না সে সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান বাংলাদেশের খবরকে। তিনি বলেন, এমন হলে দ্রুত কাজগুলো শেষ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরকৌশল (সিভিল) বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যেসব কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো অর্থের অভাবে বন্ধ থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ অর্থের সংস্থান করেই এসব কাজ শুরু করা হয়েছে। কিছু কিছু কাজ টেন্ডার হলেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। আবার কিছু কাজের কার্যাদেশ দেওয়ার পরও কাজ শুরু করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময় নিচ্ছে। তবে প্রকল্পগুলোর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই শেষ করতে ঠিকাদারদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রভাবে এমন স্থবিরতা কি না সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি এই প্রকৌশলী।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ডিএসসিসির কিছু ওয়ার্ডে খুব দ্রুত উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর নিজ উদ্যোগে এসব কাজ শেষ করিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ছিলেন। আবার কিছু কিছু অঞ্চলে বার বার বলার পরও কাজ শেষ তো দূরে থাক শুরুই করছে না। কাউন্সিলর, ঠিকাদার সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তি। জাতীয় নির্বাচনে তারা তো সব সময় প্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গেই রয়েছেন গত এক মাস। অনেক ওয়ার্ডে তো মশা মারতে ওষুধ ছিটানোরও লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads