• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
দুঃসহ যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

দুঃসহ যানজট

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

দুঃসহ যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০১৯

দুঃসহ যানজটে ক্রমেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে রাজধানী। রাজধানীতে একের পর এক ফ্লাইওভার গড়ে উঠলেও যানজট নিরসনে খুব একটা কাজে আসছে না সেগুলো। প্রতিদিন নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট দিন দিন বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানীর ৩৭টি পয়েন্টে ২৪ কারণে হরহামেশা যানজট লেগেই থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে- রাস্তার স্বল্পতা, সমন্বয়হীন রুট পারমিট, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল, মাত্রাতিরিক্ত রিকশা, সড়কের অপ্রশস্ততা, বেপরোয়া বাস-মিনিবাস, যত্রতত্র ট্রাকস্ট্যান্ড, রেলগেট, মিনিবাস, হিউম্যান হলার যানজটকে রীতিমতো স্থায়ী রূপ দিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়ক, মোড়, ট্রাফিক ক্রসিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা মানুষ সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বেশ কয়েকটি প্রধান রাস্তা এবং গলিপথে মাসের পর মাস ধরে চলছে উন্নয়নের নামে ধারাবাহিক খোঁড়াখুঁড়ি। এ কারণে যত্রতত্র পড়ে থাকছে জঞ্জাল ও নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। ভাঙাচোরা, খানাখন্দকে পুরো রাস্তার একাংশ বেদখল, অর্ধেক রাস্তাজুড়ে থাকছে শত শত গাড়ির এলোপাতাড়ি পার্কিং। মধ্যরাস্তায় বাস-মিনিবাস থামিয়েই চলে যাত্রী ওঠানো-নামানো। এসব কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে নগরবাসী ত্যক্ত-বিরক্ত। প্রতিদিন সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় লেগে থাকে তীব্র জট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে গাড়ির জ্বালানি অপচয়ের পাশাপাশি কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে।

রাজধানীর রামপুরা, মগবাজার, রাজারবাগ, উত্তরা, পল্লবী, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, প্রগতি সরণিসহ নগরীর ২১টি পয়েন্টে একযোগে নানা উন্নয়নকাজের খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সেসব স্থানে রাত-দিন ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে।

এছাড়া রাজধানীতে সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, সোনারগাঁও-এফডিসি ও মহাখালী রেলগেট এলাকা যানজটের অন্যতম কারণ। রাজধানীর ২৯টি রেলগেট পেরিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮০টি ট্রেন চলাচল করে। গড়ে ২০ মিনিট অন্তর ট্রেন চলাচল করে থাকে। তবে পুলিশের হিসাবে প্রতি ১২ মিনিট অন্তর রেলগেট বন্ধ করা হয়। এতে আটকে যায় যানবাহন। এটাও যানজটের অন্যতম একটি কারণ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাস্তবে রাস্তার তুলনায় গাড়ি বেশি এবং গাড়ির তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় নগরীতে যানজট সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন গাড়ি নামছে, কিন্তু রাস্তা বাড়ছে না। প্রতিটি সড়কের যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে। সর্বোপরি অসংখ্য রিকশা তো আছেই। এসব কারণে যানজট নিরসনে বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী উদ্যোগ-আয়োজনও সুফল বয়ে আনতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, নগরীতে এমনভাবে ভবন তৈরি হয়েছে, যেখানে রাস্তা বাড়ানোর সুযোগও কম। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকার রাস্তায় বড়জোর ২ থেকে ৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে। বাস্তবে চলছে তার চেয়ে প্রায় ছয়গুণ বেশি। এটাও যানজটের একটা কারণ। এরপরও থেমে নেই নতুন যানবাহন নামানো। রাজধানীতে প্রতিদিন ৩৭১টি নতুন গাড়ি নামছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে গাড়ি নেমেছে এক লাখ ১৪ হাজার ২৭১টি, যার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত। ২০১০ সালে যেখানে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ছয় লাখের কম সেখানে ২০১৮ সালের অক্টোবরেই সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখে। আবার অ্যাপভিত্তিক গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় গাড়িগুলোর ট্রিপ সংখ্যাও অনেক গুণ বেড়ে গেছে। অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি সংগ্রহে আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। বাইরে থেকেও প্রতিদিন প্রচুর গাড়ি ঢাকায় ঢুকছে। তাই অল্প কিছু উড়ালসড়ক বাড়লেও তা যানজট কমানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। অন্যদিকে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না গণপরিবহন। পুরনো লক্কড়ঝক্কড় বাসেই চলছে বেশিরভাগ মানুষের অতিকষ্টের চলাচল।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকাকে আমরা পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার নেই কোনো সমন্বয়। ফলে আজ এরা খুঁড়ছে তো কাল আরেক দল খুঁড়ছে। বছরজুড়েই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ লেগে থাকে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। যানজট সৃষ্টির হাজারো কারণ। এসব কারণ চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধান করার মতো কর্তৃপক্ষ নেই। সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলেও সরকার ঠুঁটো জগন্নাথের মতো আছে। নগরীর যানজট নিরসনকল্পে মাস্টারপ্ল্যান করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, সেটা করা সম্ভব না হলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। নগরবাসীকেও নির্মম বাস্তবতা মনে করে যানজটে নাকাল হওয়াটাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads