• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
হুমকিতে রাজধানী

রাজধানীতে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের হুমকির মুখে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ছবি : সংরক্ষিত

মহানগর

আগুন আর ভূমিকম্পের ঝুঁকি

হুমকিতে রাজধানী

  • মো. আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০১৯

বিশেষ প্রতিনিধি 

রাজধানীতে উঁচু ভবন নির্মাণের নীতিমালা ও নিরাপত্তাজনিত বিধিনিষেধ না মানায় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের হুমকির মুখে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় বিগত মাস ও বছরগুলোতে বেশ কিছু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নগর বিশেষজ্ঞরা অভিমত- সম্প্রতি চকবাজার, বনানীর এফআর টাওয়ার ও গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে নিরাপত্তাজনিত বিধিনিষেধ না মানার ফলে ঢাকায় মানুষ কতটা বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।

ভবন ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী সম্প্রতি সংবাদ সংস্থার সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ে কথা বলেন। আলাপে তারা ঢাকা শহরে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে ভবন নির্মাণের বিধিমালা না মানা, অসতর্কতা, ক্রমবর্ধমান গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার, কর্তৃপক্ষের তদারকি না রাখা ইত্যাদিকে দায়ী করেন।

গার্মেন্ট খাতের মতো নগরীর অন্যান্য খাতেও ভবনগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। গত মাসে পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন ও গত বৃহস্পতিবার বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সরকারিভাবে জানানো হয়, এফআর টাওয়ারে ভবন নির্মাণের বিধিমালা অবজ্ঞা করা হয়। এ ছাড়া এটির অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অকার্যকর ছিল।

‘এটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ উঁচু ভবনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব আছে’- বলেন অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সাধারণত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গ্যাস ও অন্যান্য চুল্লি, সিগারেট, গ্যাস সিলিন্ডার, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, দাহ্য ও রাসায়নিক নানান পদার্থ অগ্নিকাণ্ডের কারণ। যদিও এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ এখনো অস্পষ্ট।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে এত বেশি দুর্বল ভবন রয়েছে যেকোনো একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে এক থেকে দেড় লাখ মানুষ মৃত্যুর শিকার হতে পারেন। ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশে যথেষ্ট পরিমাণ অগ্রগতি হয়নি বলেও জানান তিনি।

স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হিসাব অনুসারে, ঢাকা শহরের ৮০ ভাগ ভবনই যথাযথ অনুমোদনের বাইরে নির্মিত। ৬০ ভাগ ভবনই নির্মাণ নীতিমালাবহির্ভূতভাবে নির্মিত। নগরের বেশিরভাগ মানুষের জন্যই ভূমিকম্প এক বড় রকমের হুমকি। বেশিরভাগ ভবনই কর্তৃপক্ষের যথাযথ তত্ত্বাবধানের বাইরে নির্মিত।

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ২০১১ সালে নগরীর ৫৩টি উঁচু ভবনে চালানো তাদের এক জরিপে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।

গৃহায়ণ ও গনপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন 'ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিল্ডিং কোড না মেনে রাজউকের নকশার পরিবর্তন করে  রাজধানীতে যেই ভবন নির্মাণ করবে তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সে যতই ক্ষমতাবান ব্যাক্তিই হোক না কেন। এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সেরকম নির্দেশনা দিয়েছেন '।

রাজউকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ উঁচু ভবনগুলো চিহ্নিত করবেন।

বিশেষজ্ঞরা সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান, যাতে করে অগ্নিদুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়। অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান তারা।

এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা বলেন, রাজউকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যাতে করে ঝুঁকিপূর্ণ নতুন ভবন নির্মিত না হয় এবং পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

নিচু ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী সেগুলোতেও প্রতি তলায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার পরামর্শ দেন। অগ্নিনির্বাপণে লোকজনকে প্রশিক্ষিত করার কথাও বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখি অনেক ভবনেই মালিক মূল গেট ও ছাদ তালাবদ্ধ করে রাখেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার কাছে চাবি দিয়ে রাখতে হবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads