• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

যশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পে ধীরগতি

কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০১৯

দীর্ঘ ৬ বছরেও শেষ হয়নি পদ্মা পাড়ের যশলদিয়া পানি শোধনাগার ফেজ ওয়ান প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। নানা রকম কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের সময় একর পর এক বাড়িয়েই চলছে ঢাকা ওয়াসা।

২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটির কাজ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। সর্বমোট ৪২ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ওয়াসা। যে কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকার। জানা গেছে, এই প্রকল্প নিয়ে ১৩ মাস আগে ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে এবং প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পরামর্শক নিয়োগের আগেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করে। কাজের জন্য আহ্বান করা হয়নি দরপত্র, ভেটিং হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এতে সরকারের কমপক্ষে পাঁচশ’ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরকষাকষি (ভেটিং) না করায় অন্তত ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের আগেই বিদেশ থেকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (পাইপ) আমদানির জন্য ব্যয় হওয়া টাকার ওপর অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়েছে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের বড় অঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে প্রকল্পের এই অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে। প্রশ্ন উঠছে কাজের মান নিয়েও।

এই প্রকল্পের পিডি রফিকুল ইসলাম বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পের (ফেজ-১) ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকা ওয়াসা। ঋণের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংককে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, ঋণের শর্তানুযায়ী চায়না প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। একই সঙ্গে প্রকল্পে ব্যবহূত পাইপ চীন থেকে আমদানির শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে যোগ্য ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। অথচ প্রকল্পের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা ওয়াসা চুক্তি করে। সরকার প্রকল্প অনুমোদন করার ১৩ মাস আগেই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে ঢাকা ওয়াসা। অথচ সরকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় ২০১৩ সালের আট অক্টোবর। ঢাকা ওয়াসার কাজের রীতি অনুযায়ী ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ নিয়ে দরকষাকষি হয়। এতে প্রতি টেন্ডারে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে দাম কমে থাকে। সে অনুযায়ী এই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার কাজে কমপক্ষে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হতো। ভেটিংয়ের নিয়ম মেনেই ঢাকা ওয়াসার ঠিকাদাররা ব্যবসা করছেন। একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভেটিংয়ের মতো ঢাকা ওয়াসার প্রচলিত নিয়ম মেনে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন ভেটিং ছাড়াই কাজ দেওয়ায় ৩৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। একই সঙ্গে পাইপ কেনার ক্ষেত্রেও সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। ঋণের শর্তানুযায়ী প্রকল্পের মাঝামাঝি সময়ে চীন থেকে পাইপ কেনার কথা। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা ঋণের শর্ত উপেক্ষা করে জমি অধিগ্রহণের চার মাস আগেই চীন থেকে পাইপ নিয়ে আসে। এরই মধ্যে পাইপগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। কাজ শুরুর আগেই চীনা ব্যাংকের টাকায় পাইপ কেনায় সুদ শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকা ওয়াসা ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ ভয়াবহ পানির সঙ্কট নিরসনে ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধন করে সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঢাকা শহরে পানির দৈনিক চাহিদা ২ কোটি ৪০ লাখ লিটার। ঢাকা ওয়াসা এই চাহিদারও বেশি দৈনিক ২ কোটি ৪২ লিটার পানি উৎপাদন করছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭ লাখ লিটারের বেশি পানি সিস্টেম লসের নামে চুরি ও অপচয় হচ্ছে। উৎপাদিত পানির মাত্র ৪৫ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থিত উৎস নদী থেকে পাওয়া যায়। সায়েদাবাদ সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে এই পানি শোধন করে সরবরাহ করা হয়, অবশিষ্ট পানি নেওয়া হয় গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূ-গর্ভ থেকে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে পানি উত্তোলনে যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি পানি উঠেও অনেক কম। এ অবস্থার অবসানে পরিবেশগতভাবে দুটি বড় টেকসই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

ওয়াসা জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাপক, ইউরোপীয় উন্নয়ন ব্যাপক (ইআইবি) ও ফ্রান্সের এএফডির অর্থায়নে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন ও সরবরাহের প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন এতে ব্যয় হবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। মেঘনা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে রূপগঞ্জ হয়ে আফতাবনগরের পাশে গন্ধর্বপুর থেকে ঢাকায় পানি আনা হবে। এই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। যশলদিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরুর পর এতে হাত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads