• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্কুল কলেজের প্রাইভেট গাড়ি যানজটের কারণ

স্কুল গেটের যানজট

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

স্কুল কলেজের প্রাইভেট গাড়ি যানজটের কারণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০১৯

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কের পাশে গড়ে ওঠা স্কুল ও কলেজের সামনে দিনের অধিকাংশ সময়ই কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। যার ফলে এসব এলাকায় যানজটের ভোগান্তি যেন নিত্যসঙ্গী।

বছরের পর বছর ধরে এসব এলাকার যানজট নিরসনে কর্তৃপক্ষ উদাসীন রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ করা হলেও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট লেগেই থাকে।

সকালে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অভিভাবক ও তাদের গাড়ি স্কুল বা কলেজ কেন্দ্রিক সড়কগুলোতে যানজট তৈরি করে। অধিকাংশ স্কুল কলেজ দুই শিফটের হওয়ায় ১২টা থেকে ২টার মধ্যে এক শিফটের ছুটির কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে একযোগে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিতে আসা গাড়ি এই সময়টিতে যানজট তৈরি করে। আবার বিকেলের ছুটিতেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। নির্ধারিত সময়ের এই যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশন বা ট্রাফিক বিভাগের কোনো বিশেষ উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। যেজন্য বছরের পর বছর ধরে ভুগতে হচ্ছে রাজধানীর এসব সড়কের বাসিন্দাদের।

দেখা গেছে, বেইলি রোড, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজটের জন্য পরিচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঢাকার নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, আজিমপুরসহ চারটি ক্যাম্পাসের একটিতেও গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এসব ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজার প্রাইভেটকার যাতায়াত করে।

একই পরিস্থিতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ক্ষেত্রেও। এই প্রতিষ্ঠানের মুগদা ও বনশ্রীতে আরও দুটি শাখা রয়েছে। একটিতেও গাড়ি রাখার ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয় মতিঝিল ক্যাম্পাসের আশপাশের রাস্তায়। সড়কের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে গাড়ি রাখা হয় নিয়মিত। অথচ বলার কেউ নেই। প্রতিদিন স্কুল শুরু ও ছুটি হওয়া মানেই ওই এলাকায় যানজটের দুর্ভোগ্য। এসময়টিতে অন্তত চার ঘণ্টার যানজট ভোগান্তি পোহাতে হয়। আইডিয়ালের পাশে মতিঝিল মডেল, সরকারি আরও দুটি স্কুলের জন্য প্রাইভেটকারে সড়ক দখলের ভোগান্তি নিয়মিত। সরকারি হিসেবে প্রতিদিন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ২১ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার কাজে।

রাজধানীর এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরবাসীর ভোগান্তির অন্যতম কারণের একটি হল এই যানজট। এজন্য স্কুলগুলোকেও দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ভোগান্তি কমাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পরিবহন (বাস) চালুর বিকল্প নেই। একটি বাসে অন্তত ৫০-৬০ যাত্রী যাতায়াতের সুযোগ পায়। অথচ ৬০ জন ছাত্রের জন্য প্রতিদিন ৬০টি প্রাইভেটকার এসব স্কুল কলেজের সামনে যাতায়াত করে।

২০১২ সাল থেকে রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যানজট নিরসন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য বাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ওই আহ্বানেও সাড়া মেলেনি।

২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি বাস দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘স্কুলবাস চালুর বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। অভিভাবকরা রাজি হলে এখনই গাড়ি দেওয়া হবে।’ সেই প্রস্তাবে প্রথমে দ্বিমত না করলেও পরে কেউ রাজি হননি।

শিক্ষামন্ত্রী পুলিশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু ধানমন্ডি এলাকায় ২১ হাজার প্রাইভেটকার প্রতিদিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার কাজ করে। এতে যানজট তো হয়ই, একটা বড় সমস্যারও সৃষ্টি হয়।’

আসাদগেটের চিত্র : আসাদগেট থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আসাদগেট মোড় থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যতদূর চোখ যাবে সড়কের দু’পাশে মনে হবে প্রাইভেটকারের মার্কেট। কোথাও এক সারি, কোথায় দুই সারিতে এস গাড়ি রাখা হয়। আসাদ গেট থেকে মোহাম্মদপুর মোড় যেতে রয়েছে ছয়টি স্কুল-কলেজ। এর কোনটিরই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। সড়কের দুইপাশে রয়েছে সেন্ট যোসেফ স্কুল, এসএফএক্স গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সেন্ট জোসেফ স্কুল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আসাদগেট থেকে মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের সামনে পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে শত-শত গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্ক করে রাখার কারণেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন স্কুলেরই নির্দিষ্ট পার্কিং প্লেস নেই। যে কারণে রাস্তাতেই পার্ক করতে হয়।

সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনত রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা দন্ডনীয় অপরাধ। তারপরেও বাস্তবতার কারণে অনেক সময় রাস্তায় পার্কিং সুবিধা দিতে হয়। বিশেষ করে কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এই সুযোগ দেয় ট্রাফিক বিভাগ। তবে অধিক যানবাহন চলাচলকারী রাস্তায় সেই সুযোগ দেওয়া উচিত না।

ট্রাফিক বিভাগের হিসাব মতে, সড়কের কম করে হলেও ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে।

স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান এসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কম-বেশি ১৫ শতাংশ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এ প্রাইভেট কারের দখলে থাকে ৭০ শতাংশেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ শতাংশ যাত্রী অন্য কোন ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তারা গণপরিবহনের মাধ্যমে সড়কের মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকা ব্যবহারের সুযোগ পান।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নামিদামি স্কুলের পাশাপাশি এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা একটি অংশও প্রাইভেটকারে যাতায়াত করে। ফলে অলি গলিতে গজিয়ে ওঠা স্কুলগুলোর কারণে যানজটের দুর্ভোগ বাড়ছে। এই এলাকায় সরু গলির কারণে যানজটে যত ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। কাকরাইল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে স্কুল শুরু ও ছুটির সময় রীতিমতো প্রাইভেটকারের মেলা বসে।

গুলশান-১ ও ২ এর বিভিন্ন এলাকাতেও সড়কের পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমতি নেই। ওখানেও রাস্তায় পার্কিং করে প্রাইভেটকার রাখার দৃশ্য চোখে পড়ে। যে কারণে এসব এলাকাতেও যানজট হচ্ছে। অন্তত দুই কিলোমিটার সড়ক অচল হয়ে যায় ফার্মগেট এলাকায় হলিক্রস স্কুলের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে স্কুল কলেজের সড়কে এই চিত্র নতুন কিছু নয়, বছরের পর বছর ধরেই চলছে। অথচ প্রতিদিন যানজটের কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি থেকে। তবুও এর বিকল্প তৈরি হচ্ছে না অজানা কারণে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads