• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আতঙ্কে বহুতল ভবন মালিকরা

একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বহুতল রাজধানীর বহুতল ভবন গুলো

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

আতঙ্কে বহুতল ভবন মালিকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০১৯

রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সব সেবা সংস্থাই। চকবাজারের চুড়িহাট্টার পর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। আত্মরক্ষার্থে বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষের করুণ মৃত্যু সবাইকে শিহরিত করেছে। এরপর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে পুড়ে যায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। অল্পদিনের ব্যবধানে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত রাজধানীবাসী।

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একই সঙ্গে যেসব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ সুবিধা বা সরঞ্জাম নেই সেগুলোর বিরুদ্ধেও চলছে অভিযান। গত সোমবার থেকে এ অভিযান শুরু হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভবন মালিকরা। কারণ রাজধানীর অধিকাংশ ভবন নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড, নিয়ম, নকশা মানা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ভবন মালিকদের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেওয়ার জোর তাগিদ দেওয়া হলেও মালিকরা বরাবরই তা উপেক্ষা করে আসছেন। এবার রাজধানীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে অভিযানে নেমেছে রাজউক। ৮টি জোনের অধীনে ২৪টি টিম (অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, ইমারত পরিদর্শকের সমন্বয়ে) ১০ তলার বেশি বহুতল ভবনগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

জোনগুলো হচ্ছে- জোন-১ (আশুলিয়া, ধামসোনা), জোন-২ (উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর), জোন-৩ (সাভার, মিরপুর), জোন-৪ (গুলশান, বনানী, মহাখালী, পূর্বাচল), জোন-৫ (ধানমন্ডি, লালবাগ), জোন-৬ (মতিঝিল, ভুলতা), জোন-৭ (কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী) এবং জোন-৮ (ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ)।

এ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভবন মালিকরা। সব ধরনের নিয়ম মেনে ভবন তৈরি না করায় রাজউকের অভিযানে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন। এমনকি তাদের ভবনের অংশবিশেষও অপসারণ করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন। পাশাপাশি ভবনে নানা সুবিধা বাস্তবায়ন করতে আর্থিক ব্যয় বাড়ারও আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

গত ২৮ মার্চ বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য এফআর টাওয়ারের নকশা রাজউক থেকে অনুমোদন করা হয়। কিন্তু সেখানে নির্মাণ করা হয় ২৩ তলা। রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এ ভবনের নকশায় আরো অনেক বিচ্যুতির খোঁজ পাওয়া যায়। এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোনো মিল নেই।

বনানীর একটি বাণিজ্যিক ভবনের এক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানীর বেশিরভাগ ভবন বিল্ডিং কোড মানে না। রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন কূটকৌশলে ভবন মালিকরা নকশার সঙ্গে ভবনের মিল রাখেন না। বেশিরভাগ ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে রাজউকের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ জনগণ। তারা জানান, আমরা চাই সব বহুতল ভবনসহ অন্যান্য ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। অভিযানের কারণে ভবন মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা অনেক বেশি।

এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, আমরা আর পেছনে যেতে চাই না। সামনে এগিয়ে যেতে যা যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করব। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আইন মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। অভিযান শুরু করেছি। এটি অব্যাহত থাকবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads