• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
এবার নজর আবাসন খাতে

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

এবার নজর আবাসন খাতে

কাজ করছে ২৪ টিম

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০১৯

আবাসন খাতকে চাঙা করতে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে সরকার। এজন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও এর আওতায় থাকা সংস্থাগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদে গঠিত সরকারের বিগত তিন মাসে বেশকিছু অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে এ খাতে। সেবা প্রক্রিয়া যেমন সহজ করা হয়েছে, তেমনি সেবাপ্রার্থীকে হয়রানি রোধে নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। একই সঙ্গে সেবাদাতা সংস্থাগুলোতে দুর্নীতি কমাতে চলছে ব্যাপক নজরদারি। 

বর্তমান সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রীই নতুন। তাদের মধ্যে অন্যতম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও পেশাগত জীবনে আইনজীবীদের নেতা হিসেবে অধিক পরিচিত। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে সাফল্যের পরিচয় রেখেছেন তিনি।

প্রথম একশ দিনের মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে অভিজ্ঞতা কেমন— এমন প্রশ্নের জবাবে শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা নিয়ে এত বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করছি। কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রশ্রয় দেবেন না জানিয়ে সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, ব্যর্থ হতে চাই না, সবার সহযোগিতা চাই এবং আমি আত্মবিশ্বাসী।

এবারেই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণ মন্ত্রী ও বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে অতীতের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তার। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অল্প সময়ে সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ ১২টি দফতর-সংস্থা কাজ করছে।

সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে রাজউকসহ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছেন নতুন মন্ত্রী। ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য ১৬টি দফতরের ছাড়পত্র গ্রহণসহ দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে হয়রানি হতে হয় জনসাধারণকে। সেবা সহজিকরণ, দীর্ঘসূত্রতা দূর করাসহ হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্বের ১৬টি দফতরের ছাড়পত্রের পরিবর্তে মাত্র ৪টি দফতরের ছাড়পত্র আবশ্যক করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের জন্য অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হতো। নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৫৩ দিনের মধ্যে নকশা অনুমোদনসহ ছাড়পত্রের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। বিক্রয়ের অনুমতি ও নামজারি জন্য অপ্রয়োজনীয় বিধানকে বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজউক, গৃহায়ণ, চউক, রাউক, কেডিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সেবা পেতে অহেতুক বিভিন্ন দফতরে যাওয়ার অবসান ঘটছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করার ভোগান্তির অবসান ঘটছে। এছাড়া আগামী ১ মে থেকে সব সংস্থায় ডিজিটালাইজেশনের আওতায় অটোমেশন পদ্ধতির প্রবর্তন করা যাবে যা সেবা গ্রহণকারীদের ভোগান্তিহীন ও দ্রুততম সময়ে সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার সব বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করতে গঠিত ২৪টি টিম ইতোমধ্যে পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট দাখিল করেছে। অনিয়মগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ববস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে যৌথ উদ্যোগে ‘রি-ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে নতুন ইমারত নির্মাণ করে মালিকদের আনুপাতিক হারে ফ্ল্যাট বণ্টনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এফআর টাওয়ার দুর্ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়মে জড়িত মালিক, ডেভেলপার এবং নির্মাণকালে দায়িত্ব পালনকারী রাজউক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাদের অবহলোয় এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে দীর্ঘদিন একই পদে থাকা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সেই সব কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। দীর্ঘদিন থাকা প্রেষণে কর্মকর্তাদের প্রেষণ বাতিল করে নিজ সংস্থায় ফেরত পাঠানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রস্তাবে সরকারি স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে সেইসব প্রস্তাব। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প অযৌক্তিক কারণে বিলম্বিত করে প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর অসদুদ্দেশ্য। মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দফতর-সংস্থায় কাজের গতি বাড়াতে আকস্মিক পরিদর্শন, অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে গতি ফিরে এসেছে কর্মকাণ্ডে।

উন্নয়ন প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিভিন্ন দফতর-সংস্থায় নিয়োজিত আইনজীবীদের প্যানেল বাতিল করে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তদবিরে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীদের অনেকেই দক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও তাদের সম্মানী ভাতা ও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজউকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে গুরুত্বপূর্ণ প্লট ও ফ্ল্যাটের নথি হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সব নথি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেন মন্ত্রী। ফলে রেকর্ড রুমে না থাকা অন্তত ৮০০ নথি উদ্ধার হয়েছে। বাকি নথি উদ্ধারের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন।

এছাড়া নথি মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গণপূর্ত অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ঠিকাদারি অসাধু ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্ত করতে ই-টেন্ডার পদ্ধতিতে দরপত্র জমা দেওয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি, বদলি ও পদায়নে তদবিরের পরিবর্তে বিধি ও নিয়ম অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মন্ত্রী রাজউক ও গৃহায়ন অধিদফতর পরিদর্শনের পর দালালদের উপস্থিতি কমেছে। ছদ্মবেশে উৎকোচের প্রস্তাব দিলেও কেউ গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছে না। একশদিনের মন্ত্রিত্বের কর্মকাণ্ডে অনেকটা ইমেজ ফিরে এসেছে রাজউকসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু কতদিন থাকবে এই ইমেজের ধারাবাহিকতা? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিক ও বিত্তবানের মুখোমুখি হতে হবে শ. ম. রেজাউল করিমকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads