• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রোগাক্রান্ত জবি শিক্ষার্থীরা

অনিরাপদ পানি

প্রতীকী ছবি

মহানগর

অনিরাপদ পানি

রোগাক্রান্ত জবি শিক্ষার্থীরা

  • জবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৯

খাবার পানিতে শ্যাওলা। যদিও এ পানি তোলা হয় ডিপকল থেকে। এ চিত্র খোদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। আর এ পানি খেয়ে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ গা করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার বলছে, মেডিকেল সেন্টারে আসা শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগ আর অনুষদ ভবনের উপরে অবস্থিত মোট ২৯টি ট্যাঙ্কের অধিকাংশই ময়লা আর ঢাকনা খোলা অবস্থায় আছে। যেখানে পড়ছে ধুলো-বালিসহ সবকিছু। কষ্টের বিষয়, এর মাঝে আছে পাখির বিষ্ঠাও।

অবকাশ ভবনের পানির তিনটি ট্যাঙ্কের ভেতরে সবুজ শ্যাওলা জমে পচে কালো হয়ে গেছে। সেটি হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী নানা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। আর এই পানি পান করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসানো পানির ট্যাপগুলোর অবস্থাও বেহাল।

এসব ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা থাকলেও সর্বশেষ কবে এসব পরিষ্কার করা হয়েছে তা বলতে পারে না কেউ। এমনকি গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

ক্যাম্পাসে পানি সরবরাহের কাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও কোনো তথ্য নেই ক্যাম্পাসের পানি কতটুকু নিরাপদ। এমনকি আদৌ ক্যাম্পাসের সরবরাহকৃত পানির কোনো পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা আক্তার বলেন, শ্যাওলা পচা ট্যাঙ্কগুলোতে বাসা বাঁধে সায়ানোব্যাকটেরিয়া। সেখান থেকে উৎপন্ন হয় ক্ষতিকর সায়ানোটক্সিন- যা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে লিভার, ফুসফুস এমনকি নিউরোনের। এসব ব্যাকটেরিয়া আর এই পানি পান করলে কখনো কখনো জ্বর, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, কিডনি অকেজো, নিউমোনিয়া, জন্ডিসসহ নানা পানিবাহিত রোগ হতে পারে।

একই বিভাগের দশম ব্যাচের ছাত্র জনি হোসেন বলেন, ক্যান্টিন থেকে প্রায়ই বোতলে পানি দিয়ে যায়। এই পানি কতটা বিশুদ্ধ তা জানা নেই। সম্প্রতি টাইফয়েড আক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র জাকির হোসেন বলেন, সুপেয় পানির ব্যাপারে প্রশাসনের অনীহা দেখে বাকরুদ্ধ আমরা। এর মাঝে ক্যান্টিনের রান্নার পরিবেশ একেবারেই জঘন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মিতা শবনম বলেন, আমাদের কাছে আসা প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত এবং ৪ শতাংশ টাইফয়েডের রোগী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা বলেন, আমি এসব দেখার দায়িত্বে নেই। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হোসেনকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন।

শামীম হোসেন বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়। শিগগিরই পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, পানি দূষণের জন্য আমাদের খেয়াল করতে হবে যে, নিজস্ব লাইনের সঙ্গে কোনো সুয়ারেজ লাইনের সংমিশ্রণ ঘটছে কিনা। পানিকে পরীক্ষা করার জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগেরই সক্ষমতা আছে। ক্যাম্পাসের পানির বিওডি, সিওডি, পিএইচ, জীবাণুসহ নানা গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়নি। এটা চাইলেই প্রকৌশল দপ্তর করতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগে ২০০৬ সালের দিকে যে ফিল্টার লাগানো হয়েছে তা পরে সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হয়নি।

জবি ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, খাবার পানির বিষয়টি অবগত নই। তবু দেখবেন এবং যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেব।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads