• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে রাজধানীর ১,৮১৮ বহুতল ভবনের

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে রাজধানীর ১,৮১৮ বহুতল ভবনের

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৯

নিয়ম না মেনে নির্মাণ করা এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে সরকার। ফলে শিগগিরই ভাগ্য নির্ধারণের মুখে পড়ছে রাজধানীর এসব ভবন। ভবনগুলোর অনুমোদনহীন অংশ অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউককে চিঠি দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গতকাল এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ড. সুলতান আহমেদকে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে কোনো সময় এসব ভবনের ত্রুটিসহ বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল রোববার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজউককে। চিঠিতে রাজধানীর চিহ্নিত এক হাজার ৮১৮টি ভবনের অবৈধ অংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী আরো জানান, শনাক্ত করা বহুতল ভবনগুলোর কোনো কোনোটা রাজউকের অনুমোদন ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে এবং নকশা নেই। কিছু ভবনের নকশা থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে। ভবন মালিকরা নকশা পরিবর্তনের কোনো অনুমোদন দেখাতে পারেননি।

জানা গেছে, গতকাল রোববার সচিবালয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এখন কিছু বলা যাবে না। আশা করি, ভালো কিছু দেখবেন।

বৈঠকের একটি সূত্র বলছে, ভবন মালিকদের একটি নির্ধারিত ফরমেটে এবার চিঠি দেবে না রাজউক। প্রতিটি ভবনের ত্রুটি সুনির্দিষ্ট করে চিঠি দেওয়া হবে। অর্থাৎ যে ভবনের যে সমস্যা তা চিঠিতে উল্লেখ করা হবে। আর চিঠির খসড়া প্রয়োজনে নিজেই চূড়ান্ত করবেন মন্ত্রী।

সূত্রমতে, রাজউক এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিলে প্রভাবশালীরা আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আদালতে গেলেও প্রভাবশালী চক্রটি যাতে নিজেদের পক্ষে আদালতের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তার জন্য শ ম রেজাউল করিম অত্যন্ত সতর্ক রয়েছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃৃতীয় মেয়াদে গঠিত সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, আমি নিজেই আইনজীবী। আমাদের পদক্ষেপের পর সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। তাই সব সামাল দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।

জানা গেছে, যত দ্রুত সম্ভব ভবন মালিকদের চিঠি দেওয়া হবে। চিঠিতে ভবনের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হবে। ভবন মালিকদের বলা হবে অবৈধ অংশ সরিয়ে নিতে। সেটি তারা না করলে ভবনের সামনে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হবে। পরে অবৈধ অংশ সিলগালা করে দেবে রাজউক। চূড়ান্ত ধাপে এসব অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হবে।

সূত্র বলছে, অনেক ভবন মালিক রাজউককে নকশা দেখাতে পারেনি। তাদের সময় দেওয়া হবে নকশা উপস্থাপনের জন্য। আর যারা নকশার বাইরে নির্মাণ করেছেন, তাদের পুনরায় অনুমোদন নেওয়া সংক্রান্ত নথি দেখাতে বলা হবে।

জানা গেছে, রাজধানীর ৭০ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। আর ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত প্রস্থানের জন্য কোনো বিকল্প সিঁড়ি পায়নি রাজউক। বাকি ৬৭ শতাংশ ভবনে এই সিঁড়ি থাকলেও ব্যবহার উপযোগী মাত্র ৪৩ শতাংশ। বাকি ৩৪ শতাংশ ভবনের সিঁড়ি ব্যবহার অনুপযোগী। রাজউকের ২৪টি দল রাজধানীর বহুতল ভবন পরিদর্শন করে। কেবল বিকল্প সিঁড়িই নয়, ১৫ শতাংশ বহুতল ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। আর বহুতল ভবন নির্মাণে যে পরিমাণ খোলা জায়গা রাখার কথা, তা মানা হয়নি ৩৭ শতাংশ ভবনের ক্ষেত্রে। ৪৭৪টি বহুতল ভবন নকশা দেখাতে পারেনি, যা পরিদর্শন করা ভবনগুলোর ২৬ শতাংশ। এছাড়া সরকারের অন্য সংস্থার ৪৪টি বহুতল ভবনেরও নকশা পায়নি রাজউক।

বনানীর বহুতল ভবন ফারুক রূপায়ণ টাওয়ারে (এফআর টাওয়ার) অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর ভবনগুলোর চিত্র জানতে মাঠে নামে সংস্থাটি। পরিদর্শন করা ভবনের মধ্যে ২৭৫টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে রাজউকের অনুমোদন নেয়নি। ৬৬৯টি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী খোলা জায়গা রাখেনি।

ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮-এর ৬০ ধারামতে, ১০-তলা বা ৩৩ মিটারের ঊর্ধ্বে যে কোনো ইমারত বা ভবন বহুতল ভবন হিসেবে স্বীকৃত। এ আইনের ফলে রাজউক এলাকায় থাকা ১০-তলা উঁচু পর্যন্ত ভবনগুলো বহুতল ভবন হিসেবে ধরা হয়নি।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কোনো ধরনের শক্তির কাছে আপস করা হবে না। রাজধানীকে নিরাপদ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads