• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রভাবশালীদের থাবায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

প্রভাবশালীদের থাবায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ জুন ২০১৯

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা এখন নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। প্রভাবশালীরা এসব স্থাপনা ভেঙে জায়গা দখলে নিতে চাইছেন। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এসব স্থাপনার নিরাপত্তায় ঠিকমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। হেরিটেজ স্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, অতিদ্রুত নিরাপত্তা না বাড়ালে প্রভাবশালীদের ‘আক্রমণে’ হারিয়ে যাবে স্থাপনাগুলো।

সম্প্রতি পুরান ঢাকার জাহাজ বাড়ি ভেঙে ফেলায় শঙ্কা বহুগুণে বেড়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরান ঢাকার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এসব স্থাপনা। যদিও উচ্চ আদালত এসব ভবনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তা রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়ার পরও আদেশ মানছেন না সংশ্লিষ্টরা।

২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চারটি অঞ্চলকে ঢাকার ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে রাজউক। গেজেটে ৯৩টি স্থাপনা ও ১৩টি সড়ককে ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৭ সালে হেরিটেজের সংখ্যা ৭৫টিতে নামিয়ে আনা হয়। ১৩টি সড়কও বাদ দেওয়া হয় তালিকা থেকে।

রাজউকের তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে আরবান স্টাডি গ্রুপ ২০০৪ সালে ঢাকার প্রায় দুই হাজার ৭০০ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। এর মধ্যে গ্রেড-১ ও ২-এ দুই হাজার ২০০ ভবন রয়েছে। এই তালিকা রাজউক, সিটি করপোরেশন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে জমা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। পরে ২০১২ সালে তারা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করে। রিটের রায়ে আদালত বলেন, কোন কোন ভবন ঐতিহ্যবাহী ও সংরক্ষণ প্রয়োজন, তার তালিকা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আরবান স্টাডি গ্রুপের খসড়া তালিকাভুক্ত ভবনে কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে না। তালিকাভুক্ত এসব বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন না দিতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত এসব স্থাপনা যথাযথ আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই কমিটিকে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাস পরপর আদালতে দাখিল করতে হবে। ওই তালিকায় গ্রেড-১-এ জাহাজ বাড়িটিও অন্তর্ভুক্ত আছে।

পুরান ঢাকা স্থাপনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় জাহাজ বাড়ি ভাঙার পরই। ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে চক সার্কুলার রোডের ‘জাহাজ বাড়ি’ ভেঙে ফেলা হয়। বাড়িটি রক্ষার জন্য ২৯ মার্চ ‘আরবান স্টাডি গ্রুপ’র প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৬ জুন বাড়িটি ভাঙা শুরু হলে তিনি আরো একটি জিডি করেন। তখন ভাঙার কাজ বন্ধ করা হলেও বাড়িটি রক্ষা করা যায়নি।

এর আগেও সূত্রাপুর থানাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি হেরিটেজ বাড়ি ভাঙা শুরু হলে পুলিশের সহযোগিতায় তা বন্ধ করা হয়।

এদিকে পুলিশ ‘জাহাজ বাড়ি’ ভাঙা বন্ধের দাবি করলেও কার্যত ঐতিহ্যবাহী ভবনটির বেশিরভাগ অংশই ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমের লোকজন হঠাৎ চকবাজারের এই ভবন ভাঙে বলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান।

অন্যদিকে আরবান স্টাডি গ্রুপের ভাষ্য, জাহাজ বাড়ি দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে বিবেচিত হতো। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইব্রাহীম খানও ভবনটির গুরুত্বের কথা জানান। এই ভবনটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে।

‘আরবান স্টাডি গ্রুপ’র প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, ‘এটা স্পষ্ট, ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো নিয়ে এখন প্রভাবশালীরা অঘোষিত যুদ্ধই ঘোষণা করেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, রাজউক ও পুলিশ কেউ আদালতের আদেশ মানছে না। হেরিটেজ রক্ষা করতে পারিনি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘শঙ্কায় আছি যেভাবে ভবনগুলো ভাঙা হচ্ছে তাতে ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। আর রাজউক যে গেজেট করেছে, প্রত্নতত্ত্ব আইন অনুযায়ী তা তারা করতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার ইতিহাস চারশ বছরের। এই ইতিহাস আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা একটা আমানত। এজন্য এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এসব স্থাপনা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় এসব ভবন ভাঙা অনেকটা সহজ।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া জানান, তিনি জাহাজ বাড়ি ভাঙার বিষয়ে কিছুই জানেন না। আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও কিছুই জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি এ দপ্তরে নতুন এসেছি। কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। আমি একটু স্টাডি করে জানতে পারব।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads