• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ডেঙ্গুর ভয়াবহত‍া বাড়ছে

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ডেঙ্গুর ভয়াবহত‍া বাড়ছে

  • রায়হান উল্লাহ
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৯

বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর সারা দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তার লাভ করে। বিশেষ করে, ঢাকা মহানগরীতে এডিস মশার দৌরাত্ম্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য তা-ই বলছে। সে অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩০ জন। সারা দেশের বেলায় সংখ্যাটি দেড়শ ছাড়িয়েছে। আর ঢাকায় গত ১১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৬ জন, যা গত এক মাসের আক্রান্তের সমান।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর ডেঙ্গু ছড়ানোর বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযোগী। এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে বাড়ির আশপাশসহ পানি জমে থাকা স্থানগুলো পরিষ্কার রাখার পরামর্শ তাদের।

এদিকে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪৭টি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর বাইরেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যেসব ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তার হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থাকে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ১৬৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন; যেখানে এর আগের মাসে অর্থাৎ জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৫৯ জন। এ ছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ৪ হাজার ২৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মেতে ১৯৩ জন, জুনে ১ হাজার ৭৫৯ জন এবং জুলাইয়ে ২ হাজার ১৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।

গত ১৪ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৬৪ জন, যা গত পুরো মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের দেড় গুণ। জানুয়ারি মাসে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৫৯ জন। আর এরই মধ্যে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে বিভিন্নভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গতকাল তিনি ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এমন সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান সংবাদমাধ্যমকে।

ডেঙ্গুর দৌরাত্ম্যে অসচেতন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন : ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ জনের এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অনিয়ন্ত্রিত হারে ডেঙ্গু বাড়ার মূল কারণ হিসেবে জনসচেতনতার অভাবই দায়ী। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিংবা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হলেও শুধু জনসচেতনতার অভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নগরবাসী বলছেন উল্টো কথা, জনসচেতনতার ওপর দায় চাপিয়ে দুই সিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। তাদের অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। নগরীর কোনো ওয়ার্ডে গত দেড়-দু’বছরে মশা নিধন কর্মীদের দেখা যায়নি বলে মত তাদের। আবার কোথাও কোথাও একবার ওষুধ ছিটালেও দীর্ঘদিন ধরে আর ওষুধ ছিটানোর কোনো লক্ষণ থাকে না। এর মাঝেই সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর (ডিএসসিসি) ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও রায়ের বাজার এলাকায় মশার ওষুধ তো দূরের কথা, মশা নিধন কর্মীদের এক নজর দেখিনি। সেখানে মশার উপদ্রবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে সে দায় কে নেবে?

শুধু এই আইনজীবীই নন, এমন অভিযোগ করেন রাজধানীর নন্দীপাড়া, জুরাইন, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ভাসানটেক, বাসাবো, শনির আখড়া, হাজারীবাগ ও বছিলার বাসিন্দারা।

আদাবর এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ বলেন, নিয়মানুযায়ী একদিন দুদিন পরপর ওষুধ ছিটানো দরকার। সেখানে মাসে একদিন ছিটানো হয়নি। এখন মশার উপদ্রব বাড়ছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন নড়েচড়ে বসেছে। আগে থেকে যদি ওষুধ ছিটানো হতো, তাহলে মনে হয় এমনটা হতো না।

এদিকে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ বলেন, ৪২৯ জন মশক নিধন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এই কর্মীরা প্রতিদিন সকাল-বিকাল মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তারা মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি যা যা করণীয় তা করার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, মশক নিধনকর্মীরা বাসাবাড়ির বাইরে ওষুধ ছিটালেও নানা কারণে বাসাবাড়ির ভেতরে ওষুধ ছিটাতে পারছেন না। এ কারণে বাড়ির ভেতরে তিন দিনের বেশি জমে থাকা টব, ফ্রিজ কিংবা বাসার ছাদের পানিতেই ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার ঘটে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ২৮০ জন কর্মী সকাল-বিকাল ওষুধ ছিটাচ্ছেন। পাশাপাশি পাঁচ অঞ্চলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তদারকি করছেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলা যাবে না। কাজ ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু ওই যে আন্ডার কনস্ট্রাকশন এবং বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানির কারণেই তা পুরোপুরি কাজে আসছে না। কারণ সেসব জায়গায় তো ওষুধ ছিটানো যায় না।

প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেই কিন্তু বিনামূল্যে মিলছে চিকিৎসা : সমালোচনার মুখে পড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গতকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই টিম ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে।

যদিও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষেধক নয়, প্রতিরোধেই কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এমন কার্যক্রম জনগণের সঙ্গে আরেকটা উপহাস হবে। তারা বলছেন, ‘একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান যখন মশা বা তার রোগ প্রতিরোধের কাজে কোটি টাকা খরচ করেও ব্যর্থ হয়, তখন সেটি যেমন দুঃখজনক। তেমনি প্রতিষেধক নিয়ে যখন মাঠে নেমে আরো অর্থ খরচ করা হবে কিন্তু স্থায়ী সমাধান মিলবে না তাও দুঃখজনক।’

অন্যদিকে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ এবং পরামর্শ দিতে গতকাল সোমবার থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত পক্ষকালীন স্বাস্থ্যসেবা চলবে।

বিভাগটি জানায়, ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চলের ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪৭৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬৮টি ভ্রাম্যমাণ টিম চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করবে।

এমন খবরেও খুশি নন পরীবাগের বাসিন্দা শরীফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পাশের ফ্ল্যাটে একই পরিবারের দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। এ এলাকায় মশার ওষুধ না ছিটিয়ে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কর্তৃপক্ষ কী করে প্রতিষেধক নিয়ে মাঠে নেমেছে?’

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা শিবলী সাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরব্যাপী মশার ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও কালেভদ্রে দেখা মেলে এই কার্যক্রমের। তাও আবার শুনছি মশার ওষুধের কার্যকারিতাও নেই।’

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা রাজু ইসলাম বলেন, বিনামূল্যে চিকিৎসা চাই না, রোগ যেন না হয় সেটা চাই।

রামপুরার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দিতে মাঠে নামবে ভালো কথা। কিন্তু যারা এখনো সুস্থ, সামনের দিনগুলোতে সুস্থ থাকতে পারব তা নিশ্চিত করবে কে?’

এদিকে নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবীব বলেন, ‘শুধু ওষুধের গল্প বলে, ফগার মেশিনের ধোঁয়া ছিটিয়ে এ অকাল অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ নেই। এটা এক ধরনের প্রতারণাও বটে। প্রতিষেধক আসবে কিন্তু প্রতিরোধ হবে না এটি দুর্ভাগ্যজনক।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘রোগের প্রতিষেধক নিয়ে ডিএসসিসির উদ্যোগ ধন্যবাদ পাবে। কিন্তু প্রতিরোধ নিশ্চিত করাই হবে কার্যকর কিংবা স্থায়ী সমাধান।’

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘ডিএসসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিষেধকও ভুক্তভোগী নাগরিক কিংবা রোগীর নাগালে পৌঁছে দেবে বিনামূল্যে। এজন্য চাহিদাপত্র দিয়ে আমরা বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতনসহ ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম পরিচালনা করব।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু মশা নিধনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনবল স্বল্পতার কারণেও তাৎক্ষণিক সব বিষয়ে সমাধান দিতে পারছি না।

সামগ্রিক বিষয়ে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘ডিএসসিসি এলাকার সর্বত্রই মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ মশার ওষুধ কাজ করছে না। বিষয়টি আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। কারণ সরকারিভাবেই এসব ওষুধ তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি। সংস্থা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওষুধ মানহীন হলে নতুন ওষুধ দেবে।

আক্রান্ত সিংহভাগই শিশু : ডেঙ্গু জ্বরে দেশে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশি শিশু। যেসব রোগী দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শতকরা ৩৪ শতাংশ শিশু। আর নারীদের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অধিদপ্তরের ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি মোট ৪৭টি হাসপাতাল থেকে পাওয়া।

তথ্যে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া এক হাজার ১২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় বিশ্লেষণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে ৩৫৮ শিশু ডেঙ্গু রোগী।

কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শিশুর পরিস্থিতি দেখতে পৃথকভাবে হিসাব রাখা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পর্যায়ক্রমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব রোগীর লিঙ্গভিত্তিক পরিচয় রাখা হবে। ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বৃদ্ধি বিবেচনায় রেখে গত বছর থেকেই ঢাকা শিশু হাসপাতাল আলাদাভাবে ডেঙ্গু রোগীর হিসাব রাখছে। তাদের হিসাব চলছে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় এক হাজারের মতো শিশু ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। এদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ শিশুর বয়স ৫ বছরের কম। আর মোট আক্রান্তের ৯৮ শতাংশের বয়স ১২ বছরের নিচে। চলতি বছরও ভর্তি হয়েছে ১২৬ জন শিশু।

দিনে দেড়শর বেশি মানুষ আক্রান্ত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে প্রতিদিন দেড়শ জনের বেশি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯৩৮ জন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিনুল বাশার বলেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই সচেতন হওয়া বেশি জরুরি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। রোগের ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। এতে আগের চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের বেশি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। যারা প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের থেকে যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ও লিভারের রোগ রয়েছে, তাদেরও ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। এ ধরনের রোগীদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads