• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সাত কলেজের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে ছাত্রলীগ

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

সাত কলেজের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে ছাত্রলীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৯

রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার চতুর্থ দিনের মতো ঢাবির ভবনগুলোয় তালা ঝোলানোর চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগের পাহারায় ক্লাস পরীক্ষা শুরু হলেও গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা কয়েকটি ভবনে ফের তালা দেন। যদিও ওসব তালা ছাত্রলীগের সহযোগিতা এবং উপস্থিতিতে কর্মচারীরা ভেঙে ফেলেন।

টানা তিন দিনের অচলাবস্থার পর গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু বিভাগে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবারও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদের চোখে আঘাত লাগে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

এসএম হলের ছাত্রলীগকর্মী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাবিল হায়দারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে সকালে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা গ্রুপে গ্রুপে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এই সময় আন্দোলনকারীদের কাউকে দেখা যায়নি। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আমাদের শুধু আশ্বাস দিয়ে আসছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কোনোরকম আস্থা রাখতে পারছে না। আমাদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয়। আমাদের দাবি একটাই—সেটা হচ্ছে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করতে হবে। অধিভুক্তি বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন এবং যে অসহযোগ কর্মসূচি চলছে তা চলমান থাকবে এবং আমাদের দাবি যদি না মানা হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করা হয় সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার সমুচিত জবাব দেবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তালাটা লাগাচ্ছি আমরা প্রতীকী হিসেবে।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের কয়েকজন আপু এবং একজন ভাই আমাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আসছিলেন, সেখানে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী তাদের আটকায় এবং তাদের আন্দোলনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে।

এদিকে সাত কলেজ সংকটের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে গতকাল উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। স্মারকলিপি দেওয়ার আগে দুপুরে অপরাজেয় বাংলায় এক সমাবেশে ক্লাস-পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টিকারীদের ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। ঘোষণা অনুযায়ী, ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের অবস্থানের কারণে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক কোনো ভবনে তালা ঝোলাতে পারেননি। ফলে, সকাল থেকে কিছু কিছু বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এলাকা, রেজিস্ট্রার ভবন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, উপাচার্য কার্যালয় এলাকা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এলাকা, আইন অনুষদ এলাকা, কার্জন হল এলাকা, এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবন এলাকা এবং মোকাররম ভবন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক কেন্দ্র্রীয় নেতা বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাইয়ের নির্দেশে আমরা ভোর ৬টা থেকে অবস্থান নিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা সচল করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads