• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মেয়রদের একক কর্তৃত্ব সিটি করপোরেশনে

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

মেয়রদের একক কর্তৃত্ব সিটি করপোরেশনে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৪ আগস্ট ২০১৯

মেয়রদের একক কর্তৃত্বে চলছে দেশের সব সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকারব্যবস্থার অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সিটি করপোরেশনের মেয়রদের একক সিদ্ধান্তে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।

 এভাবে দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা। অথচ কাউন্সিলররা মহল্লার সমস্যা সমাধানে সক্রিয় হলে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা আরো কার্যকর হতে পারে। সাধারণ মানুষ আরো বেশি উপকৃত হতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম, সিটি করপোরেশন, সিলেট সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন, খুলনা সিটি করপোরেশন এবং রংপুর সিটি করপোরেনের চিত্র প্রায় একই। নিয়ম মানতে কাউন্সিল সভা হয় সব সিটি করপোরেশনে। কিন্তু কার্যত সার্বিকভাবে সিটি করপোরেশন পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণ নেই। সব সিদ্ধান্ত মেয়র নিজেই নিয়ে থাকেন। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হয়। এসব কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন সচিব, বিভিন্ন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সব সংস্থাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন ব্যবস্থাও দুর্বল হচ্ছে। আইনে সিটি করপোরেশন পরিচালনার কথা যেভাবে বলা হয়েছে সেটি বাস্তবে নেই। এটি দুঃখজনক। কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি হলেও তাদের সেবার মানসিকতা কমে যাচ্ছে। আবার তাদের সম্পৃক্তও করা হচ্ছে না। মেয়রসর্বস্ব হয়ে পড়েছে স্থানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আইনে যতটুকু বলা আছে, সেটুকু কার্যকর হলেও সাধারণ মানুষের কল্যাণ হতো। সেটিও হচ্ছে না। 

ডিএসসিসির একজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে আমাদের সম্পৃক্ততা খুবই কম। মেয়র একাই সব করেন। আর সঙ্গে রাখেন আমলাদের। সবকিছু যেন মেয়রকেন্দ্রিক। আমাদের কেউ খোঁজ রাখেন না। প্রয়োজন হলে মেয়র আমাদের ডাকেন। সবকিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ারও করা হয় না।

সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১২টি কাজ সুনির্দিষ্ট করা আছে আইনে। সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ মোতাবেক কাজগুলো হচ্ছে—বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা, নগর অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, ক্রীড়া পরিচালনা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, যোগাযোগ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। এত বিপুল কাজের মধ্যে মানুষ সিটি করপোরেশন দুটি কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অন্যটি মশা নিধন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিভিন্ন কাজের জন্য স্থায়ী কমিটি গঠন করার কথা। আইনে বাস্তবায়ন দেখাতে এসব কমিটি কেবল কাগজে-কলমে রয়েছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কমিটি গঠন করা হয়েছে একজন কাউন্সিলরের সভাপতিত্বে। ওই কমিটির একজন সদস্য ও একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাংলাদেশের খবরকে জানান, সর্বশেষ কবে এই কমিটির বৈঠক করেছেন তা তার মনে নেই। সেটি হয়তো ৩-৪ মাস হয়ে থাকতে পারে। তবে সেখানে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়, তার বাস্তবায়ন হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এই ভয়াবহ আকার নিতে পারত না।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমি এককভাবে সব করছি এমন কথা ঠিক নয়। সব সিদ্ধান্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে নেওয়া হয়। জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হলে কাউন্সিল সভায় তাদের অবহিত করা হয়।’

সিটি করপোরেশন আইনের ৪৮ ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশনের সব কর্মকাণ্ড স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়র অথবা কর্মীদের দ্বারা সম্পাদিত হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা সিটি করপোরেশন মেয়র হচ্ছেন তারা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের কেউই কাউন্সিলরদের আমলে নিচ্ছেন না। এ ছাড়া মেয়ররা সরাসরি সরকারের শীর্ষ স্তরে যোগাযোগ রক্ষা করেন চলেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত কাউন্সিলরদের জানানো হয় না। সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও মনোভাব কাউন্সিলরদের ঠিকমতো জানানো হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুশাসন নিশ্চিত করতে উত্তরে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়েছে অনেক আগেই। তবে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দক্ষিণে এখনো প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত করেননি সাঈদ খোকন। একই চিত্র গাজীপুর সিটি করপোরেশনের। এক বছর পেরিয়ে গেলেও প্যালেন মেয়র চূড়ান্ত হয়নি সেখানে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্যানেল মেয়র কাউন্সিলরদের চাইতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করতে হবে, সমর্থন করতে হবে। সেটি না হলে আমি কীভাবে প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত করব। তবে এই সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করে পরিচালিত হয়। আমি এককভাবে কোনো কিছু করি না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads