• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাট পাবেন বস্তিবাসী

ছবি : সংগৃহীত

মহানগর

ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাট পাবেন বস্তিবাসী

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৯

বস্তিবাসীর জীবন মানের উন্নয়ন করতে চায় সরকার। ঢাকার প্রতিদিনের জীবনযাপনে বস্তিবাসীর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। যার বেশির ভাগই যাচ্ছে চাঁদা হিসেবে। স্থানীয় পেশিশক্তির অধিকারীরা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এসব অর্থ ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বস্তিবাসীর জীবন মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে শুরু করেছে সরকার।

সূত্র বলছে, কর্মসূচির আওতায় ঢাকা ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে ভাড়ায় ফ্ল্যাট পাবে বস্তিবাসী। সরকারের হিসাবমতে, বর্তমানে বস্তিতে একটি পরিবার থাকতে বিভিন্ন ধাপে যে অর্থ খরচ হচ্ছে, তার থেকে কম অর্থ ব্যয়ে বস্তির পরিবারগুলো মানসম্মত ও উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে। এ জন্য সরকারের সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে চায়।

জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার আলাপকালে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পর্যায়ক্রমে আমরা প্রথম পর্যায়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বস্তিবাসীর জন্য ভাড়ার ভিত্তিতে ফ্ল্যাট দিতে শুরু করব। আশা করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম ধাপে মিরপুরে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা যাবে। আস্তে আস্তে আমরা এটি বাড়াব।

শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, রাজধানীর মিরপুরে মডেল হিসেবে বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, দেশের প্রতিটি মানুষ মানসম্মত জীবন পাক। তা ছাড়া জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার কাজ করছে। তার আওতায়ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে।  

মহাখালীর নাখালপাড়া বস্তির ঘুপচি ঘরে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন রাহেলা আক্তার। বাসাবাড়িতে কাজ করেন তিনি। সারা দিনের কাজ শেষে কোনোমতে মাথা গোঁজেন তিনি। সন্তান ও স্বামীকে চৌকিতে শুতে দিয়ে নিজে সিমেন্টের বস্তা বিছিয়ে ঘুমান। সকাল হলেই বস্তির হাজারো লোকের ভিড়ে হাতে গোনা কয়েকটি টয়লেটে কার আগে কে যাবেন-এমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই মর্জিনাকে টয়লেট ব্যবহার না করে মানুষের বাসায় কাজে যেতে হয়।

অন্যদিকে বস্তির স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে দিনের পর দিন শুয়ে প্রায়ই তার জ্বর-সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা হয়। কিন্তু তিনি এগুলো কিছুই আমলে নেন না। খুব বেশি সমস্যা হলে পাশের এক পীরের কাছে গিয়ে দোয়া আর পানিপরা খেয়ে নেন বলে জানান। তার মতোই অন্য বস্তিবাসী পরিবারগুলোর জীবন।

অপরদিকে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মতপার্থক্যসহ নানা কারণে বস্তিতে আগুন দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আগুন দিয়ে দুস্থ পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে সেই জায়গা দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বস্তিবাসী অবৈধ জায়গায় থাকেন। তবে বিনা ভাড়ায় থাকেন না। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। যারা ফ্ল্যাট পাবেন তারা সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব বলেন, ঢাকার বস্তি এলাকার আশপাশে যেখানে সরকারের খালি জায়গা আছে, সেখানেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর হিসাবমতে, কেবল ঢাকাতেই বস্তির সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৯টি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট বস্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯টি। মোট খানা এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৪০টি। উত্তর সিটির বস্তিতে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ জন।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট বস্তি ১ হাজার ৭৫৫টি। বস্তির খানার সংখ্যা ৪০ হাজার ৫৯১টি। জনসংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬ জন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আদাবর থানায় ৪৭২ বস্তি, বাড্ডায় ১২১, বনানীতে ১০, দারুস সালামে ৫৪, ভাষানটেকে ৮, গুলশানে ৮, কাফরুলে ১০৯, খিলক্ষেতে ৭১, মিরপুরে ১১৭, মোহাম্মদপুরে ২৮৪, পল্লবীতে ৭০, রামপুরায় ১৬৮, শাহআলীতে ১৫ ও শেরেবাংলা নগরে ১৩৮টি বস্তি রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে বংশাল থানায় ১৯ বস্তি, চকবাজারে ১৫০, ধানমন্ডিতে ১৭, গেন্ডারিয়ায় ৪৯, হাজারীবাগে ২৪৩, যাত্রাবাড়ীতে ১৬৫, কলাবাগানে ৫, কামরাঙ্গীরচরে ২৬৫, খিলগাঁওয়ে ৪২৬, কোতোয়ালিতে ৫, লালবাগে ২৭৮, মতিঝিলে ৪, নিউমার্কেট থানায় ৫, রমনায় ৮, শাহজাদপুরে ৭৯, শাহবাগে ৭, সূত্রাপুরে ৫ ও ওয়ারী থানায় ২৫টি বস্তি রয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে বস্তিতে আগুনে সরকারি হিসাবে প্রায় ৩ হাজার বস্তিঘর পুড়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে জানা গেছে। বস্তিতে বসবাসকারী ৭৫ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।

জানা গেছে, জাতীয় গৃহনির্মাণ কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ) নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর-১১ তে ১০ একর জমির ওপর বস্তিবাসীর জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত পদক্ষেপের ধারণা এবং জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮ একর জমির ওপর ৮০টি ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করে নয় হাজার ৪৬৭টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads