• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

ইজিবাইক নিষিদ্ধ, স্বস্তি খিলক্ষেতে

বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ব্যাটারিচালিত অনুমোদনহীন ইজিবাইক ও অটোরিকশার উৎপাত থেকে রেহাই মিলেছে রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দাদের, স্বস্তি ফিরেছে তাদের মধ্যে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে বন্ধ হয়েছে রাস্তায় চলাচল করা এসব অবৈধ যানবাহন। এলাকাটিতে প্রায় ২ হাজার ২শ ইজিবাইক ও অটোরিকশা প্রতিদিন রাস্তায় যাত্রী পরিবহনে ছিল। প্রশাসন গত শুক্রবার থেকে খিলক্ষেতে ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। বেপরোয়া গতি, শৃঙ্খলা না মানা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় বিষফোড়া হয়ে উঠেছিল অটোরিকশাগুলো। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাসিন্দারা এসব অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে একটি অসাধুচক্র অবৈধ বাণিজ্যের অংশ হিসেবে অনুমোদনহীন এসব যান খিলক্ষেতে চলার সুযোগ করে দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর খিলক্ষেতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস। তুলনামূলকভাবে বাসা ভাড়া কম হওয়ায় অনেকে এই এলাকায় থাকার জন্য পছন্দ করেন। এছাড়া রাজধানীর বনানী, গুলশান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও উত্তরায় যাদের অফিস তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে থাকার জন্য এলাকাটি বেছে নিয়েছেন। তবে প্রতিদিন রাস্তায় নামলেই ছিল ইজিবাইকের উৎপাত। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকি কারণ ছিল এসব ব্যাটারিচালিত যান। চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক সময় নারী ও শিশুরা দুর্ঘটনায় পড়ত। রাস্তায় অটোরিকশাচালকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকত।

জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা আর কিছুতেই এসব ইজিবাইক রাস্তায় নামতে দিতে চাই না। তবে এলাকার বাসিন্দাদের ইজিবাইকের পক্ষে ও বিপক্ষে মত রয়েছে। অনেকেই আমাদের ফোন করে বলছেন, এটা কী করলেন? আমরা ইজিবাইকে কম টাকায় চলাচল করতে পারতাম। এখন বেশি টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হবে। এটি সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট। আবার অনেকে ইজিবাইক তুলে দেওয়ার পক্ষে।

অবৈধ বাণিজ্যের অংশ হিসেবে এসব ইজিবাইক রাস্তায় চলেছে কি না প্রশ্নে ওসি বলেন, এটি আপত্তিকর প্রশ্ন। এখানে না থাকলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। আমাদের সব ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হয়। 

খিলক্ষেতে পরিবার নিয়ে থাকেন রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইজিবাইকগুলোর উৎপাতে রাস্তায় হাঁটা  যেত না। কোন দিক থেকে কোনটা এসে গায়ের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়— এই চিন্তা থাকত। আমরা এই এলাকার বাসিন্দারা ভীষণ অস্বস্তিতে ছিলাম। প্রশাসন রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অনুমোদনহীন এসব যান বন্ধ করায় ধন্যবাদ দিতে চাই। তবে এসব যান যাতে আবার টাকার বিনিময়ে রাস্তায় নামতে না দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি সংঘবদ্ধচক্র, প্রতিটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। ফলে প্রায় এক লাখ টাকার মতো চাঁদা আদায় হতো প্রতিদিন। বছরে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যের উৎস ছিল এই যানবাহনগুলো। এর অংশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মী, পুলিশ, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও পেতেন।

খিলক্ষেতের বালুর মাঠের কাছে একজন ইজিবাইকের চালক আলাপকালে বলেন, তারা প্রতিদিন টাকা দিয়ে ইজিবাইক চালান। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার থেকে পুলিশ তাদের রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। তাই গ্যারেজে তালা দিয়ে রেখেছেন মালিকরা। প্রশাসন তাদের পেটে লাথি মেরেছে। তবে মালিকরা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। শিগগিরই তারা আবার রাস্তায় নামতে পারবেন বলে ধারণা এই অটোরিকশাচালকের।

অপরদিকে খিলক্ষেত রেললাইনের কাছে পায়ে চালিত রিকশার এক চালক আলাপকালে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কারণে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলাম না। এগুলো রাস্তার শৃঙ্খলাও নষ্ট করে। অনেক সময় পথচারীদের শরীরে গিয়ে লাগে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads