• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

আত্মগোপনে ঢাকার অনেক কাউন্সিলর

জরুরি প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের কাজে পাওয়া যাচ্ছে না

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০১৯

চলমান শুদ্ধি অভিযানে আতঙ্কে আছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলর। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ কেউ দেশের বাইরেও চলে গেছেন গোপনে। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

গত কয়েক দিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের দুই ডজন কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় অনুসন্ধানের জন্য। তাদের মধ্যে ১৭ জনকেই পাওয়া যায়নি। অনেকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বাকিদের অনেকে ফোন ধরলেও স্বীকার করতে চাননি তার পরিচয়। দু-একজন নিজের পরিচয় স্বীকার করেছেন।

দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় সব কাউন্সিলরই আতঙ্কে রয়েছেন। মোট কাউন্সিলর সংখ্যা ১৪৮ জন। এর মধ্যে দক্ষিণে মোট কাউন্সিলর রয়েছেন বর্তমানে ৭৬ জন। যাদের মধ্যে ১৯ জন সংরক্ষিত নারী বাদে ৫৭ জন পুরুষ। অন্যদিকে উত্তরে পুরুষ কাউন্সিলর রয়েছেন ৫৪ জন। আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রয়েছেন ১৮ জন। সব মিলিয়ে উত্তরে মোট কাউন্সিলর ৭২ জন।    

অবশ্য এসব বিষয়ে জানতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের একজনকেও পাওয়া যায়নি। দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বর্তমানে কোপেনহেগেন রয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। ফলে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলাম মিজানকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বাসা ও অফিসেও অভিযান চালায়। অস্ত্র, মদ, ব্যাংকের চেক ও এফডিআর নথি পাওয়া যায় তার বাসায়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, গত মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকায় সরকার আকস্মিক শুদ্ধি অভিযান শুরু করে। এরপর শুরুতে খুব বেশি ভীতি ছড়ায়নি। তবে আস্তে আস্তে এটি এগিয়ে যেতে থাকে। আর এতেই ভয় বাড়তে থাকে সর্বমহলে। তারই অংশ হিসেবে কাউন্সিলরদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে যারা অংশ নেন তাদের অধিকাংশের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। খুনের মামলার আসামিও রয়েছেন কাউন্সিলরদের কয়েকজন। বিশেষত, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তারা অনেকে কাউন্সিলর হয়েছেন। কাউন্সিলর হয়ে এলাকার জনকল্যাণের দিকে না গিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন অনেকে। ফলে এই শুদ্ধি অভিযানে তারা ভয়ে আছেন।       

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনে ফোন করে অনেক কাউন্সিলরকে পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য অনেকেই বলছেন, মেয়রদের একক শাসনে চলছে দেশের সব সিটি করপোরেশন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সিটি করপোরেশন মেয়রদের একক সিদ্ধান্তে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। এভাবে দিন দিন অকার্যকর প্রতিষ্ঠানের দিকে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা। অথচ কাউন্সিলররা মহল্লার সমস্যা সমাধানে সক্রিয় হলে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা আরো কার্যকর হতে পারে। সাধারণ মানুষ আরো বেশি উপকৃত হতে পারত।

জানতে চাইলে, সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সব সংস্থাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন ব্যবস্থাও দুর্বল হচ্ছে। আইনে সিটি করপোরেশন পরিচালনার কথা যেভাবে বলা হয়েছে সেটি বাস্তবে নেই। এটি দুঃখজনক। কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি হলেও তাদের সেবার মানসিকতা কমে যাচ্ছে। আবার তাদের সম্পৃক্তও করা হচ্ছে না। মেয়রসর্বস্ব হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আইনে যতটুকু বলা অছে সেটুকু কার্যকর হলেও সাধারণ মানুষের কল্যাণ হতো। সেটিও হচ্ছে না। 

অবশ্য জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম আলাপকালে বলেন, আমি এমন কোনো অপরাধ করিনি যার কারণে ভয়ে থাকতে হবে। আমি সততা নিয়ে কাজ করেছি। কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আমার নেই। আমার বাবাও কাউন্সিলর ছিলেন। এই কমিশনার বলেন, আমি প্রতিদিন সকালেই অফিসে যাচ্ছি। অবশ্য অনেক কাউন্সিলরই অফিস করছেন না বলে জানা গেছে। অবশ্য ক্যাসিনোকাণ্ডের কারণে দক্ষিণের ২০ জন কাউন্সিলর গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সরকারের শুদ্ধি অভিযান এরই মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে এটি কতটা সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে বিশ্লেষকরা সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মী আটক হয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads