• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে ব্যাংকের মালিকানা ছাড়তে হবে উদ্যোক্তাদের

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে ব্যাংকের মালিকানা ছাড়তে হবে উদ্যোক্তাদের

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত আলোচনায় বক্তারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মালিকানা পাবলিকের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে ব্যবসার জায়গা হিসেবে না ভেবে জনগণের আমানতের সুরক্ষাও দেওয়া অতি জরুরি। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ক্রিসেল-এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাফফর আহমেদ বলেন, যারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তারা ধীরে ধীরে মালিকানা থেকে সরে যান, পাবলিক মালিক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো। তারা তো সারা জীবন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সর্বময় ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে। এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। করপোরেট গভর্ন্যান্স একদম নাই। আর তা হচ্ছে না মালিকদের সদিচ্ছার অভাবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট টাকার মধ্যে পরিচালকদের হচ্ছে মাত্র ৫ শতাংশ। আর আমানতকারীদের হচ্ছে ৯৫ শতাংশ কিন্তু সব সুবিধা নিচ্ছে ও কর্তৃত্ব করছে ওই ৫ শতাংশ- মালিক পরিচালকরা। তারা গোটা ব্যাংকের মালিক সেজে বসে আছেন। এটা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না, এটা মানা যায় না। এই বিষয়ে রাজনীতিকদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমাতে হবে।

অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর লোনেবল ফান্ড ক্রাইসিস তৈরি হবে। আমরা দেখছি প্রাইভেট সেক্টর মুনাফা করলে নিজের আর লোকসান করলে সরকারের। ফারমার্স ব্যাংক তার অন্যতম উদাহরণ। এভাবে চলতে পারে না। দেশের ৪ শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপি, ৯৬ শতাংশ অনিচ্ছাকৃত খেলাপি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ছোটখাটো ঋণ খেলাপি পেলে সঙ্গে সঙ্গে লিখে দেন। আর বড় বড় খেলাপির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। পরিদর্শন কর্মকর্তা প্রথমে তার বিভাগীয় প্রধানকে অবগত করেন। আবার এমনও হয় পরিদর্শনে যাওয়ার আগের রাতে ওই কর্মকর্তাকে ফোনে অবগত করা হয়। কীভাবে খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় হবে?

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ব্যাংক ব্যবসা এখন খুবই লাভজনক। তার চেয়ে বেশি লাভজনক হচ্ছে এমপিগিরি ও রাজনৈতিক ব্যবসা! বাজার অর্থনীতি রাজনীতিকে বাজারনীতিতে পরিণত করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনীতি ভালো আছে এরকম মিথ্যা তথ্য যারা প্রচার করছে, তাদের সাজা হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকার লুটপাটকারীদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়েছে। দেশে যে উন্নয়ন হয় তার সুফল ভোগ করে ৫ শতাংশ ধনী, সাধারণ জনগণের জন্য কোনো উন্নয়ন হয় না। বাংলাদেশে ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৯ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ধনী বাড়ার হার বাড়লে গরিব বাড়ার হারও বাড়ে। অর্থনীতি আয় বৈষম্য এত বেশি যা এশিয়ার অনেক দেশ এর ধারেকাছেও নেই।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপি ঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট।

অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আর্থিক খাতের টালমাটাল অবস্থায়ও কেন নতুন ব্যাংক হচ্ছে? কারণ ব্যাংকে যে পরিমাণ লাভ হয় অন্য কোনো খাতে এই পরিমাণ লাভ হয় না। গড় হিসেবে ব্যাংক খাতের লাভ ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত। সরকার ত্রাতা সেজে লুটপাটকারীদের রক্ষা করে চলছে। এই নীতি চলতে থাকলে এই অরাজকতা থেকে আর্থিক খাতকে রক্ষা করা যাবে না।

বাম জোটের সমন্বয়ক ও আলোচনা সভার সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংকট লুটপাটের রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা থেকেই উৎসারিত। ফলে আর্থিক খাতের সংকট কাটাতে হলে রাষ্ট্রের শাসন ও প্রশাসন ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে।

আলোচনা শেষে তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধের দাবিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওইদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখে ঘেরাও মিছিল করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads