• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
করোনা আতঙ্কে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

প্রতীকী ছবি

মহানগর

করোনা আতঙ্কে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম। মৃত্যুর এই সংবাদ ভর করেছে জমে থাকা ভীতিতে। চারদিকে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মস্থল এমনকি ভাড়া বাড়িতেও স্বস্তি পাচ্ছে না মানুষ। নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে নগর-বন্দর ছাড়ছে সবাই। ঢাকাবাসী সাধারণত ঈদের খুশিতে বেশি মাত্রায় রাজধানী ছাড়ে; এখন ছাড়ছে শঙ্কায়। দোকানপাট বন্ধ। সব মিলিয়ে ঢাকার চিত্রটাই বদলে যাচ্ছে দ্রুত। চেনা রাজধানীকে অচেনা মনে হচ্ছে।

গ্রামীণফোন ইতোমধ্যে তাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসের কাজ করতে। এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছে। রাজধানীর স্টেডিয়ামগুলোতে খেলাধুলা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আগেই। সিনেমা হলও বন্ধ। অসুস্থ থাকলে মসজিদেও না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে কোনো কোনো এলাকা ‘শাটডাউন’ করা হবে। গণপরিবহন বন্ধ হচ্ছে এমন চাউরও ছিল দিনজুড়ে। অ্যাপসচালিত ক্যাব ও মোটরসাইকেল সার্ভিসও কম ছিল গতকাল।

এদিকে গত সোমবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর গ্রামে ফিরছে ঢাকাবাসী। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকাত্যাগী মানুষের বহর বাড়ছে। লঞ্চ, ট্রেনসহ দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ডে গত দুদিন ধরে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ফলে রাজধানী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। যানজট নেই, ব্যস্ত মোড়ে মানুষের জটলাও নেই। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও কম। নগরীতেও অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতি থাকলেও কর্মব্যস্ত সচিবালয়ে গতকাল দর্শনার্থীর সংখ্যাও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল।

গতকাল বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা শাহবাগ, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, বাংলামোটর, কাকরাইল ছিল অনেকটাই ফাঁকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যানজট ছিল না। যানবাহন চলেছে হাতেগোনা। বাস ও মিনিবাসগুলো যাত্রী সংকটে একই স্থানে দাঁড়িয়ে থেকেছে অনেকক্ষণ। বিনা সভা-সমসাবেশে মানুষের ঢল থাকা গুলিস্তান এলাকার জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা ও ফুটপাত অনেকটাই ফাঁকা। গুলিস্তান এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার যেখানে নেমেছে সেখানে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকলেও গতকাল ছিল ভিন্নরূপ। হাতেগোনা কিছু বাস চলাচল করেছে। সেগুলোতে যাত্রীও ছিল কম। পুরো গুলিস্তানজুড়ে ছিল না কোনো কোলাহল। পল্টন এলাকাতেও লোকসমাগম তেমন ছিল না। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকা পুরানা পল্টন মোড়ে গাড়ি চলাচল করেছে খুবই কম। সে কারণে বক্সে অলস সময় কাটিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ।

কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিট কাউন্টারগুলোতে ভিড় লেগে আছে। স্টেশনের প্লাটফরমে যাত্রী ভিড় ছিল বেশ। স্টেশনের একজন কর্মচারী ইসমাইল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন এলাকামুখী ট্রেনগুলোতে যাত্রী অনেক। তবে উল্টোটা ঢাকামুখীর বেলায়। হাতেগোনা যাবে ঢাকামুখী যাত্রী। অর্থাৎ ঢাকামুখী ট্রেনগুলো অনেকটা ফাঁকাই আসছে।

মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা পরিবহনের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, সকাল থেকে উত্তরাঞ্চলের দূরপাল্লার বাসগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। তিনি বলেন, করোনা আতঙ্কে অনেকেই পরিবার পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালেও সকালে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল বলে জানান বাস মালিকরা।

যাত্রাবাড়ী থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী বলাকা পরিবহনের চালক রুস্তম আলী বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যাত্রীসংখ্যা একেবারে কমে গেছে। যাত্রী নেই বলে রাস্তায় গাড়িও বেশি নামেনি। মতিঝিল শাপলা চত্বরে সাইফুল নামে এক যাত্রী জানান, তিনি উত্তরা থেকে বাসে মতিঝিল এসেছেন। রাস্তায় যানজট ছিল না, গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। তার মতে, এমতাবস্থায় উত্তরা থেকে আধা ঘণ্টায় মতিঝিল আসা যায়। তবে বাসটি যাত্রী তোলার জন্য বিভিন্ন স্থানে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকায় বেশি সময় লেগেছে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা মিজানুর রহমান খান জানান, স্কুল-কলেজ ছুটি থাকায় রাস্তায় যানবাহনের চাপ কম। একই কারণে মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছে কম। সবচেয়ে বড় কথা করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারণেই মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads