• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
দূষিত নগরী ঢাকা এখন ‘ঝকঝকে’

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

দূষিত নগরী ঢাকা এখন ‘ঝকঝকে’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২০

দীর্ঘদিন বিশ্বের দূষিত নগরীর তালিকায় ঢাকা এক নম্বরে অবস্থান করছে। সেই ঢাকায় এখন অনেকটাই ঝকঝকে পরিবেশ। সব হয়েছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের বদৌলতে। শত চেষ্টাতেও যা করা যায়নি, চোখে দেখা যায় না এমন একটি মারাত্মক জীবাণুর আতঙ্কই বদলে দিয়েছে রাজধানীর পথঘাটের চেহারা।

বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষকে আক্রান্ত করে বাংলাদেশে নভেল করোনা ভাইরাস আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরের তালিকারও পরের দিকে থাকা ঢাকার অনেক রাস্তাঘাট, অলিগলিই এখন ঝকঝকে।

দোকানপাট বন্ধ থাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, পলিথিনের ছড়াছড়ি দেখা যায় না। নিজেদের প্রয়োজনেই মানুষও এখন বাড়িঘরের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছে। গাড়িঘোড়া, কলকারখানা, বেশির ভাগ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় দেখা যায় না ধুলার মেঘও। ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে কাগজেকলমে ‘লকডাউন’ না হলেও নগরবাসী এখন নিজেদের বন্দি করে ফেলেছে চারদেয়ালের মাঝে।

এমন সুনসান পরিস্থিতির মধ্যে নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, বেইলি রোড, রাজারবাগ, মমিনবাগ, গুলবাগের অলিগলি ঘুরে পরিচ্ছন্ন ঢাকার কিছু টুকরো টুকরো চিত্র চোখে পড়ল।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুবিদ আলী রাজারবাগ ও নয়াপল্টন লেন এলাকার গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে ময়লা নিতাছি, তবে আগের মতো বেশি ময়লা নাই। গলির রাস্তাটা দেখেন কত পরিষ্কার। ২০ দিন আগেও এই রাস্তার চেহারা এমন ছিল না।’

এর কারণ জানতে চাইলে সুবিদ আলী বলেন, ‘স্যার ঠ্যালার নাম বাবাজি। বিপদে পড়লে মানুষ সচেতন হয়। এই গলির কথাই বলি। ২০ দিন আগেও এই গলির রাস্তার দুই ধারের বাড়ি-ফ্ল্যাটের উপরতলার স্যাররা টিস্যু পেপার ফেলতেন, বাচ্চারা চকলেটের খোসা ফেলত। কিন্তু এখন বাসাবাড়ির স্যাররা সতর্ক হইছেন। নিজের ঘর যেমন পরিষ্কার রাখছেন, বাইরের আঙিনাও পরিষ্কার করছেন।’

আবর্জনার দুর্গন্ধ দূর করতে আগে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হলেও এখন আর করতে হচ্ছে না বলেও জানান সুবিদ আলী।

শান্তিবাগ গলির মোড়ে ঠেলাগাড়িতে করে তরিতরকারি বিক্রি করছিলেন আমিন মিয়া। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও ওই জায়গার চারপাশে আবর্জনা, তরিতরকারির খোসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত। এখন একেবারেই কিছু নেই।

আমিন মিয়া বলেন, ‘এইখানে ১৫ বছর যাবৎ তরিতরকারি বেচি। এই গলিতে আমার বান্ধা (নিয়মিত) কাস্টমার আছে। তিন দিন আগে উনারা বইলা দিছেন, এখানে ব্যবসা করতে হলে চারপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হইব। নইলে এখানে আর বসতে পারমু না।’

করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের সচেতনতামূলক লিফলেট দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস অপরিষ্কার জায়গায় নাকি বেশি থাকে। সে জন্য বারবার সবাইরে হাত ধুইতে কইছে, সবাইরে মাইনা চলতে কইছে।’

বেইলি রোডের অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আকবর সর্দার বলেন, ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘সাত বছর যাবৎ বাসাবাড়ির ময়লা নিই। বিভিন্ন বাসাবাড়ির সামনে ময়লা পড়ে থাকতেও দেখছি। গত কয়েক দিন যাবৎ ওই রকম দেখি না।’ তিনি বলেন, ‘আপনি বেইলি রোডের লম্বা সড়কটা দেখেন। দুই পাশে খাবারের অনেক দোকানপাট। বড় লোকের ছেলেমেয়েরা আসে খাবার-দাবার খাইতে। কিন্তু যেইভাবে রাস্তার পাশে কোকের গ্লাস, আইসক্রিমের খোসা ফেলেন- এইটারে আপনি কী কইবেন? এখন এখানকার দোকানপাট বন্ধ, দেখেন এখন বেইলি রোডের রাস্তা কত পরিষ্কার।’

মমিনবাগের বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আমাদের মনের ভেতরে যে রকম আতঙ্ক-উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সচেতনতাও বেড়েছে। আগের চেয়ে আমরা নিজের অথবা নিজেদের সম্পর্কে সজাগ হয়েছি, সেলফ কেয়ারনেস বেড়েছে।’

এটাকে আমি মানুষের জীবনের জন্য ইতিবাচক ডেভেলপমেন্ট বলতে চাই। বৈশ্বিক এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতাবোধটাই আমাদের জন্য রক্ষাকবচ হতে পারে। আমি নিজে এখন বাসা ও চারপাশের আঙিনা পরিষ্কার রাখছি। ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের পরিষ্কার থাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads