• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হবে হাজার হাজার কুকুর

ফাইল ছবি

মহানগর

ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হবে হাজার হাজার কুকুর

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৮ আগস্ট ২০২০

ঢাকা শহর থেকে ৩০ হাজার কুকুর শহরের বাইরের লোকালয়ে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।

মো. আবু নাছেরে বলেন, "কুকুরগুলোকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।"

"প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কুকুরগুলোকে মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তরিত করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কুকুরগুলো খাবারের সংকটে পরার আশঙ্কা রয়েছে বলে সেটা বাতিল করা হয়েছে," বলেন মি. নাছের।
কুকুরগুলোকে স্থানান্তরিত করার পরও যাতে খাবারের সংকট তৈরি না হয় তার জন্য সেগুলোকে ঢাকার বাইরের জনপদ অর্থাৎ যেখানে মানুষের বসবাস রয়েছে তেমন কোন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

তবে কোন কোন এলাকায় এগুলোকে নিয়ে যাওয়া হবে সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

কুকুর নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর ২০১৭ সালে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রাস্তা ঘাটে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের সংখ্যা অন্তত এক লাখ।

ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা নাদিরা জাহান জানান, এর আগে কাঁঠালবাগান এলাকায় থাকতেন তিনি। সেখানে বাসায় ফেরার পথে কুকুরের কামড়ের ভয়ে বাসা পরিবর্তন করে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় উঠেছেন তিনি। তবে এখানেও সেই একই অবস্থা।

তবে এই এলাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার একাধিক রাস্তা থাকায় কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন তিন। কুকুরের ভয়ে যাতায়াতের পথই পরিবর্তন করে নিয়েছেন তিনি।

নাছের বলেন, সম্প্রতি ঢাকা শহরের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে কুকুর সম্পর্কিত নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

"অনেকে বলছেন যে, কুকুরে কামড়াচ্ছে, অনেকে বলছে বাসা থেকে বের হতে পারছি না, বাচ্চা-কাচ্চারা ভয় পাচ্ছে, আসলে নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।"

কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পে ত্রুটি দেখা দেয়ায় এদের বংশ বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ঢাকার রাস্তায় হঠাৎ করেই কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তবে এর কিছুটা অন্য চিত্র রাজধানীর মিরপুর এলাকার। সেখানকার বাসিন্দা ইশরাত জাহান বলেন, তার এলাকায় একাধিক কুকুর থাকলে সেখানকার বাসিন্দারা ভয় না পেয়ে উল্টো মাটির পাত্রে করে কুকুরের খাবার দেয়।

এদিকে কুকুরগুলোকে স্থানান্তরের বিরোধিতা করেছেন প্রাণী কল্যাণ নিয়ে কাজ করা আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, স্থানান্তর করলে আসলে সমস্যা কমবে না বরং আরও বাড়বে।

এনিমেল কেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন আফজাল খান। তিনি বলেন, এতো সংখ্যক কুকুরকে একসাথে কোন একটি অঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হলে সেখানে অবশ্যই খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

তিনি বলেন, "মফস্বল বা গ্রাম্য এলাকায় যদি কুকুরগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই খাবারের সংকট হবে। কারণ শহরের মানুষদের মতো সেখানকার বাসিন্দারা কুকুরের প্রতি এতোটা সংবেদনশীল নয়।"

"খাবারের সংকট হওয়ার কারণে তখন কুকুরগুলো মানুষকে কামড়ানোর চেষ্টা করবে," মি. খান বলেন।

এছাড়া কুকুর নিধন এবং স্থানান্তর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ বলেও জানান মি. খান। এর পরিবর্তে কুকুরগুলোকে বন্ধ্যা করা এবং জলাতঙ্ক টিকা দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত।

২০১৪ সালেই ঢাকার সিটি কর্পোরেশন কুকর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে। পরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন আলাদা করে ভ্যাক্সিন দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

তবে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০১৬ সালেই ঢাকায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের পর চিকিৎসা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads