• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বন্দিদের পরিবার থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগ

প্রতীকী ছবি

মহানগর

বন্দিদের পরিবার থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বিভিন্ন মামলার আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। তারা নিজেদের কখনো কারারক্ষী আবার কখনো সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কারাগারে আসামির অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ঝামেলার কথা বলে অথবা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে কৌশলে টাকা দাবি করছে প্রতারকচক্রের সদস্যরা। অনেকেই এদের ফাঁদে পড়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকাও দিচ্ছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলী থানায় মো. নুরুল আমিন নামে এক ভুক্তভোগীর করা অভিযোগের তদন্তে নেমে এরকম চক্রের বিষয়ে জানতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

তদন্তে নেমে গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর ডেমরা থেকে চক্রের সদস্য রফিকুল ইসলাম সুমন এবং যাত্রাবাড়ী থেকে চক্রটির কাছে ভুয়া নাম-পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বিক্রেতা মো. শামীমকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তবে চক্রের হোতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে এরশাদ এখনো পলাতক।

রাজধানীর কদমতলী থানায় ভুক্তভোগী নুরুল আমিনের করা অভিযোগে বলা হয়, তিনি কারাগারে থাকাকালীন গত ২৬ জুলাই বিকেলে তার স্ত্রী হেলেনা আক্তারের মোবাইল ফোনে একটি নম্বর থেকে কল করা হয়।

ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি বলেন, ‘আপনার স্বামী জেলখানায় অন্য আসামির সঙ্গে মারামারি করেছেন। এক আসামির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। ওই আসামির মাথায় ১৬টি সেলাই লেগেছে। সে জেলারের আত্মীয়। এক লাখ টাকা না দিলে আপনার স্বামীর অনেক সমস্যা হবে। সে কোনোদিন জেল থেকে বের হতে পারবে না। ’

টাকার জন্য প্রতারক চক্রের সদস্যরা বারবার ফোন করে চাপ দিতে থাকেন উল্লেখ করে নুরুল আমিন জানান, টাকা নেওয়ার জন্য দুটি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়। নুরুল আমিনের স্ত্রী কোনো উপায় না পেয়ে ওই দুটি বিকাশ নম্বরে ৭২ হাজার টাকা পাঠান। পরে গত ৩০ জুলাই জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন নুরুল আমিন। কারাগারে কোনো ধরনের গন্ডগোল হয়নি বলে তিনি পরিবারের সদস্যদের জানান।

ভুক্তভোগী নুরুল আমিন বলেন, ‘কদমতলী থানার পাশেই রহিম মার্কেটে আমার কাপড়ের দোকান আছে। একটি চুরির মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমার স্ত্রীকে ফোন করে টাকা চান প্রতারকরা। যারা টাকা চেয়েছেন, তাদের কাউকেই আমি চিনি না। আমার স্ত্রীর ফোন নম্বর কীভাবে তারা পেলেন তাও আমার জানা নেই।’

ডিবি বলছে, চক্রটির সদস্যরা প্রথমে কারাগারে অথবা রিমান্ডে থাকা আসামিদের পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। পরে ওই নম্বরে কল করে কারাগারে থাকা আসামির অসুস্থতা বা কোনো ঝামেলার কথা বলে অথবা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। এই চক্র অনেক আসামির পরিবারের কাছ থেকে এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে ডিবি। চক্রটির সঙ্গে আর কারা জড়িত এবং আসামিদের পরিবারের ফোন নম্বর তারা কীভাবে সংগ্রহ করেন সে বিষয়ে তদন্তও চলছে বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম টিম ইনচার্জ এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে নানা কৌশলে টাকা নেওয়া চক্রের হোতা জাহাঙ্গীর একজন পেশাদার প্রতারক। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। তিনি ১০টি বিয়ে করেছেন। অনেকের কাছ থেকে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে চক্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। ’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাহাঙ্গীর আলম এরশাদ পেশাদার প্রতারক। তার রয়েছে নিজস্ব সিন্ডিকেট। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের টার্গেট করেন তিনি। প্রথমে আসামির পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। গ্রেপ্তারের পর আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠালে তিনি (জাহাঙ্গীর) কারারক্ষী পরিচয় দিয়ে আসামির পরিবারের সদস্যদের ফোন করেন। তাদের বলেন, ‘কারাগারে গিয়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে গন্ডগোল করেছেন আপনার স্বজন, টাকা না দিলে এই অপরাধে তার বড় ধরনের শাস্তি হয়ে যাবে। ’

আবার গ্রেপ্তার আসামি রিমান্ডে গেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিচয় দিয়ে তার পরিবারকে বলেন, ‘টাকা দিলে রিমান্ডে মারধর করা হবে না। না হলে মেরে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়া হবে।’

এভাবে গ্রেপ্তার আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করেন জাহাঙ্গীর। বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন টার্গেট করা পরিবারকে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, যেসব নম্বর থেকে টার্গেট করা পরিবারে কল করা হয় তার একটিও চক্রের কোনো সদস্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা নয়। তারা একটি সিমকার্ড বেশিদিন ব্যবহারও করেন না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফুটপাতে বসে সিমকার্ড বিক্রেতা মো. শামীমের কাছ থেকে তারা সিম কেনেন। শামীম অন্যদের কাছে বিক্রি করা সিমকার্ডের তথ্য ও এনআইডি নম্বর দিয়ে জালিয়াতি করে সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করে রাখেন। সেসব সিমকার্ড বেশি দামে প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করেন। এসব সিমকার্ড দিয়ে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। শামীমের কাছ থেকে সিমকার্ড কিনে থাকেন জাহাঙ্গীর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads