• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মাস্ক ব্যবহারে তদারকি নেই

মুখে মাস্ক নেই, করোনায় একদমই ভয়হীন এসব মানুষ! ছবিটি রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মার্কেট থেকে তোলা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

মহানগর

মাস্ক ব্যবহারে তদারকি নেই

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০২০

বর্তমান করোনাকালে বিশ্বের প্রতিটি দেশে সব জায়গায় মাস্ক পরাটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের লোকজন এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। জুলাই মাসে সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে। আসন্ন শীতে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কাকে সামনে রেখে আবারো সবাইকে মুখে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সপ্তাহেই মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সভায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এখন থেকে ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মাস্ক না পরলে জরিমানা অর্থাৎ অর্থদন্ড করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা হতে পারে। মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এসব নির্দেশের তদারকি আগে হয়নি। ফলে বেশিরভাগ লোকজন মাস্ক ছাড়াই পথে-ঘাটে বের হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে মাস্ক না পরার কারণে জরিমানা হয় না। শুধু আহবানই নয়, সঠিক তদারকি প্রয়োজন। ধারণা করা হচ্ছে, আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে করোনা ভাইরাসের উপদ্রব অনেকাংশে কমে আসবে।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর তাণ্ডব চলছেই। তাতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বাংলাদেশে প্রায় সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৬ হাজারের কাছাকাছি। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি স্থান চীনকে বেশ আগেই ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, ছাড়িয়ে গেছে আরো অনেক দেশকে। এই করোনা ভাইরাসকে এড়াতে প্রথম যে শর্তগুলো তা হলো, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তার একটিও মানছে না এদেশের মানুষ। ফলে আক্রান্তদের সংখ্যা খুব একটা কমছে না। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা তো মাসের পর মাস প্রায় একই রকম রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর অবস্থা দেখেও একদিকে লোকজনের হুঁশ হচ্ছে না; অন্যদিকে তাদের ওপর তেমনভাবে চাপ প্রয়োগেরও কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। এদেশে যখন করোনার পরীক্ষা বাড়তে শুরু করে তখন আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক আকার ধারণ করে। যেখানে সার্ক অঞ্চলের শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপের মতো দেশ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দারুণ সফল, সেখানে বাংলাদেশ একই অঞ্চলের ভারত ও পাকিস্তানের মতোই ব্যর্থ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহার না করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। ফলে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার অনেক দেশেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অতি দ্রুত একটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা দেখলে মনে হবে, এই যে করোনা ভাইরাস, সেটা লোকজনের কাছে একটা উৎসব। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের মর্মান্তিক গল্প উঠে আসছে, সরকারের তরফ থেকে নানা ধরনের সতর্কবার্তা মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে- এসব যেন মানুষের মন রোমাঞ্চ বয়ে আনছে।

লন্ডনে মাস্ক না পরলে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ জরিমানার সিস্টেম চালু হয়নি। সরকার করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার যেসব আইন করেছে, সেটা সবাই মেনে চলছে বলে অর্থ জরিমানার বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। স্পেনে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। না পরলে ৫০ থেকে ৬০০ ইউরো অর্থ জরিমানা গুনতে হয়। ইতালিতে মাস্ক ছাড়া কোনো স্কুল, শপিং মলে, অফিসে প্রবেশ করা যাবে না। মাস্ক ব্যবহার না করলে ইতালিতে ১০০ থেকে ১০০০ ইউরো অর্থ জরিমানা দিতে হয়। স্কুলের বাচ্চাদের মুখে মাস্ক থাকা ছাড়াও ব্যাগে একটি অতিরিক্ত মাস্ক রাখার নিয়ম। মাস্ক নিয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ আইন কাতারে। সেখানে মাস্ক না  নিয়ে ঘরের বাইরে গেলে ২ লাখ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৫ লাখ টাকারও বেশি) অর্থ জরিমানা গুনতে হয়। অনাদায়ে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড। কম অর্থ জরিমানা করলে লোকজন মাস্ক না ব্যবহার করে জরিমানা দেবে, এই আশঙ্কা থেকেই বড় অংকের অর্থ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে সবার ভেতরে ভয় থাকে। জার্মানিতে মাস্ক ছাড়া কাউকেই শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল কেন্দ্র, স্কুল, অফিস, সরকারি-বেসরকারি অফিস, কাচা বাজার- কোথাও প্রবেশ করতে দেবে না।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগ প্রতি ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃতের হিসাব, সুস্থতার সংখ্যা প্রকাশ করছে গত কয়েক মাস যাবত। তাতে দেখা যায়, সর্বশেষ ১০০ দিনে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন লোক করোনায় মারা গেছে। পরীক্ষা বেশি হলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে, পরীক্ষা কম হলে সংখ্যা কমে। কিন্তু মৃত্যুর হার প্রায় আগের মতোই আছে। বাংলাদেশের মাস্ক ব্যবহার খুব কম। যে যা-ই বলুক, মাস্ক ব্যবহার ঠিকমতো হলে আক্রান্তের হার কমতো। অবশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহারে আইন সঠিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কাগজে-কলমে নির্দেশনা থাকলেও, তার তদারকি নেই। বাংলাদেশে নিয়মিত পত্রপত্রিকা, টিভি, বেতার, ব্যানারে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশের খবরের পক্ষ থেকে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে যারা কাজের জন্য বের হচ্ছে, তাদের শতকরা ৮০ জনই মাস্ক ব্যবহার করে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads